দানা র ভয়াবহতা জনজীবন বিপর্যস্ত
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে কলকাতা ও এর আশপাশের এলাকায় জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। বিমান, ট্রেন এবং ফেরি পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষের চলাচল ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে, মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, কলকাতায় মেট্রো পরিষেবা স্বাভাবিক থাকবে এবং কোনও রকম পরিবর্তন করা হচ্ছে না। এমনটাই জানিয়েছেন মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র।
মেট্রো পরিষেবা: ঝড়ের মধ্যেও লাইফলাইন
ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কের মধ্যেও মেট্রো পরিষেবা স্বাভাবিক রাখার সিদ্ধান্ত এক বড় স্বস্তি। কৌশিক মিত্র জানিয়েছেন, ‘‘ঝড় আসছে জেনেও অনেকেই মেট্রো পরিষেবার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আমি স্পষ্ট করে জানাতে চাই যে, মেট্রো পরিষেবা বন্ধ থাকবে না, এটি স্বাভাবিক থাকবে। কোনো সময়সূচি পরিবর্তন করা হচ্ছে না।’’
মেট্রো রেলের তরফে জানানো হয়েছে যে দক্ষিণেশ্বর-দমদম-কবি সুভাষ লাইনে প্রতিদিনের মতোই মেট্রো চলবে। দমদম থেকে কবি সুভাষ এবং কবি সুভাষ থেকে দমদম পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা রাত ১০টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত চলবে। এমনকি ঝড়ের সময়ও এই সময়সূচিতে কোনও পরিবর্তন হবে না। সবুজ লাইন অর্থাৎ হাওড়া ময়দান থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত পরিষেবাও ঠিক থাকবে। সল্টলেক থেকে শিয়ালদহ মেট্রো পরিষেবাতেও কোনও বিঘ্ন ঘটবে না। তবে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় থেকে কবি সুভাষ পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা প্রতিদিনের মতো রাত ৮টায় বন্ধ হবে। জোকা থেকে মাঝেরহাট লাইনেও পরিষেবা নিয়মিত সময়ে বন্ধ হবে। মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, “মেট্রো রেল কলকাতার লাইফলাইন, ঝড়ের কারণেও তা বন্ধ হবে না।”
‘দানা’র প্রভাব এবং প্রশাসনিক সতর্কতা
‘দানা’ ঘূর্ণিঝড় বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে। এর সম্ভাব্য ‘ল্যান্ডফল’ হতে পারে ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামারার মধ্যবর্তী স্থানে। এর ফলে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অঞ্চলে সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে। কলকাতায় ঝড়ের বেগ সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার হতে পারে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন তৎপর। কলকাতা পুরসভা একাধিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চালু রাখা হয়েছে একাধিক হেল্পলাইন নম্বর এবং কন্ট্রোল রুম। কলকাতার পরিস্থিতি সরাসরি পর্যবেক্ষণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার রাতে নবান্নে থাকবেন এবং পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যালোচনা করবেন।
অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থা স্থবির
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রেল এবং বিমান পরিষেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শিয়ালদহ স্টেশনে ১৯০টি লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই দক্ষিণ এবং হাসনাবাদ শাখার। এছাড়া, হাওড়া থেকে শুক্রবার ভোরে কিছু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দর থেকেও উড়ান পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, ১৫ ঘণ্টা উড়ানের ওঠানামা বন্ধ থাকবে এবং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই এই পরিষেবা বন্ধ থাকবে।
ফেরি পরিষেবাও বন্ধ রাখা হয়েছে, ফলে নদীপথেও কোনো ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা নেই। শুধুমাত্র মেট্রোই স্বাভাবিক থাকবে, যা শহরের মানুষের জন্য একমাত্র আশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে মেট্রো পরিষেবা বন্ধ না হওয়ার ঘোষণা এক বড় স্বস্তি হিসেবে এসেছে।
জনজীবনে অস্থিরতা ও আতঙ্ক
ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে জনজীবন কার্যত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মানুষ বাড়ির বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছে এবং যাতায়াতের সমস্ত রকম ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় তারা চরম অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। তবে, মেট্রো পরিষেবা সচল থাকায় জরুরি প্রয়োজনে অনেকেই এর উপর নির্ভর করছেন। প্রশাসনের নির্দেশ মেনে সবাই ঘূর্ণিঝড়ের সময় সতর্ক থাকতে এবং নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলেছে।
‘দানা’র প্রভাবে শহরের জনজীবন থমকে গেলেও মেট্রোই এই মুহূর্তে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে রয়ে যাচ্ছে, যা মানুষের কাছে কিছুটা হলেও স্বস্তির কারণ।

