Sunday, April 13, 2025

ঘূর্ণিঝড় দানা র প্রভাবে পর্যটকশূন্য ওড়িশার সৈকত

Share

ঘূর্ণিঝড় দানা পর্যটকশূন্য ওড়িশার সৈকত

ওড়িশার জনপ্রিয় সৈকতগুলি, যা সারা বছর পর্যটকদের ভিড়ে পরিপূর্ণ থাকে, বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে শূন্য হয়ে পড়েছে। সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে এই সৈকতগুলোর দৃশ্যের পরিবর্তন। বুধবারের মধ্যে এই পরিবর্তন আরও দৃঢ় হয়ে উঠেছে, যেখানে খাঁখাঁ করছে গোপালপুর, পুরী, পারাদ্বীপ, চাঁদিপুর এবং অন্যান্য সৈকত। সমুদ্রের ঢেউগুলি এখন গর্জন করে আছড়ে পড়ছে সৈকতে, কিন্তু নেই কোনো পর্যটক বা শোরগোল।

ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র আসন্ন প্রভাবে পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে প্রশাসন বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করেছে। রাজ্য প্রশাসন সোমবার জানায় যে মঙ্গলবারের মধ্যে সমস্ত পর্যটককে ওড়িশা ছাড়তে হবে। ফলে মঙ্গলবারের মধ্যে পুরী, গোপালপুর এবং চাঁদিপুরের মতো জনপ্রিয় পর্যটনস্থলগুলো ক্রমেই পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে। এখন সৈকতগুলোতে মাত্র কিছু সদস্যের দেখা মিলছে, যারা হলেন রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এসডিআরএফ), জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) সদস্য এবং পুলিশের কড়া নজরদারি।

সোমবার রাত থেকেই পর্যটকদের জন্য গোপালপুর এবং সুনাপুর সৈকত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জগৎসিংহপুর জেলা প্রশাসন আবার পারাদ্বীপ এবং সিয়ালি সৈকতেও পর্যটকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ‘দানা’ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সমুদ্রের ঢেউ ৭-৮ ফুট পর্যন্ত উঠতে পারে, তাই সৈকতের কাছাকাছি কোনো পর্যটক যাতে ঘেঁষতে না পারে, সেজন্য প্রশাসন নজরদারি চালাচ্ছে।

মৌসম ভবন জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামারা দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে, যখন এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০-১১০ কিলোমিটার হতে পারে। সর্বাধিক গতি ১২০ কিলোমিটারেও পৌঁছতে পারে। বর্তমানে ‘দানা’ ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে, ধামারা থেকে ৩১০ কিলোমিটার এবং সাগরদ্বীপ থেকে ৩৭০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে।

এই অবস্থায় সরকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে এবং সাধারণ মানুষকে ঘূর্ণিঝড়ের সময় নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য নির্দেশ দিচ্ছে। এর ফলে, প্রভাবিত অঞ্চলে জীবনের সাধারণ গতি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। সৈকতগুলিতে শূন্যতার এই চিত্র প্রমাণ করে যে, মানুষ তাদের নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।

পর্যটন শিল্পের জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা। পর্যটকদের উপস্থিতি ছাড়া, সৈকতগুলো বর্তমানে সম্পূর্ণ বিপর্যয় মোকাবিলার বাহিনীর দখলে। প্রশাসন আশাবাদী যে, ঘূর্ণিঝড়টি দ্রুত চলে যাবে এবং পরে সৈকতগুলো আবার আগের মতো পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হবে। তবে, মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে, কারণ মৌসুমি পরিবর্তন এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন অনেক সময়ই অপ্রত্যাশিত।

এখন সময় এসেছে সরকার, প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর। যে কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে সকলকে একত্রিত হতে হবে। ওড়িশার সৈকতগুলি যখন আবার আগের মতো ভিড়ে পূর্ণ হবে, তখনই প্রমাণ হবে মানুষের সংকল্প এবং সহযোগিতার।

বর্তমান পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে এবং একে অপরের সহযোগিতা প্রয়োজন। সৈকতের খাঁখাঁ আওয়াজে যে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, তা মোকাবিলায় একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে আমাদের।

Read more

Local News