ঘূর্ণিঝড়
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ থেকে বুধবার জন্ম নিয়েছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘দানা‘। আগামী ২৪ অক্টোবর ভোরে এই ঝড় উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে প্রবল আকার ধারণ করবে এবং পরবর্তীতে ওড়িশার ভিতরকণিকা ও ধামারার মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে উপকূলে আছড়ে পড়বে। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ‘দানা’র কারণে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ভারী বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে, যার ফলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র বর্তমান অবস্থান এবং গতিপথ:
এই মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ৫২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে, পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ থেকে ৬০০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ৬১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে। গত ছয় ঘণ্টায় এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার বেগে অগ্রসর হয়েছে। ২৪ অক্টোবরের রাতে থেকে ২৫ অক্টোবরের সকালের মধ্যে ‘দানা’র গতি আরও বৃদ্ধি পেয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।
ওড়িশার প্রস্তুতি:
ওড়িশা সরকার ইতোমধ্যেই সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় তৎপর হয়েছে। জগৎসিংহপুর, কেন্দাপাড়া, ভদ্রক এবং বালেশ্বরের মতো জেলাগুলোতে ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে জানিয়েছে মৌসম ভবন। এই জেলাগুলোতে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অপেক্ষাকৃত কম প্রভাব পড়বে ময়ূরভঞ্জ, পুরী, ভুবনেশ্বর এবং কটকের মতো এলাকায়।
বুধবার সন্ধ্যা থেকেই উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টি শুরু হতে পারে, এবং বৃহস্পতিবার এই এলাকাগুলিতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওড়িশার ১৪টি জেলায় স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, প্রায় ২৮৮টি উদ্ধারকারী দল এবং ৮০০টিরও বেশি দুর্যোগ আশ্রয়শিবির প্রস্তুত করা হয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, এবং প্রায় ৫০০টি অতিরিক্ত আশ্রয়শিবির তৈরি করা হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের প্রস্তুতি:
পশ্চিমবঙ্গেও আগাম প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ঝড়ের সম্ভাব্য আঘাতের আশঙ্কায় প্রশাসন সতর্কতা জারি করেছে। উপকূলবর্তী অঞ্চল যেমন নামখানা, সাগরদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, এবং বকখালি এলাকায় সোমবার থেকেই প্রশাসনের তরফ থেকে মাইকিং করে সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
পাশাপাশি, দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন কন্ট্রোল রুম চালু করেছে এবং পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। ২০০টিরও বেশি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে, যাতে ঝড়ের সময় পরিবহন ব্যবস্থায় কোন বিপর্যয় না ঘটে।
ঝড়ের সম্ভাব্য প্রভাব:
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র আঘাতে উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ভারী বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়ার কারণে গাছপালা উপড়ে পড়তে পারে, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যেতে পারে এবং বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা রয়েছে, যা নিচু এলাকাগুলোতে বন্যার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
এই দুর্যোগ মোকাবিলায় সতর্কতা বজায় রাখতে প্রশাসন সকলকে পরামর্শ দিয়েছে এবং যাদের কাঁচা বাড়িতে বসবাস তারা যেন নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়।