গ্র্যাচুইটির নতুন নিয়মে বড় বদল!
গ্র্যাচুইটির নিয়মে ঐতিহাসিক পরিবর্তন আনল কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। এত দিন পর্যন্ত যেখানে টানা পাঁচ বছর চাকরি না করলে গ্র্যাচুইটি পাওয়ার সুযোগ ছিল না, সেখানে নতুন শ্রম আইনে সেই সময়সীমা কমিয়ে মাত্র এক বছরে নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে সরকারি সংস্থা হোক বা বেসরকারি, বিশেষ করে চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা (Fixed Term Employees) এই সিদ্ধান্তের সুফল তাড়াতাড়িই পাবেন।
নতুন নিয়ম কার্যকর হওয়ার পর থেকেই উৎসাহ দেখা দিয়েছে কর্মীদের মধ্যে— গ্র্যাচুইটি কীভাবে গণনা হবে, কত টাকা মেলে, কে কত কর দেবেন— এই সমস্ত বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখা জরুরি।
নিচে দেওয়া হল গ্র্যাচুইটি হিসেবের পূর্ণাঙ্গ ফর্মুলা ও নিয়মাবলি, যা অনুসরণ করে যে কোনও কর্মী ঘরে বসেই নিজের গ্র্যাচুইটির পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবেন।
গ্র্যাচুইটি গণনার সরকারি সূত্র
গ্র্যাচুইটি হিসেব করা হয় কর্মীর সর্বশেষ মূল বেতন (Basic Pay) এবং চাকরির মেয়াদের উপর ভিত্তি করে।
সরকার নির্দিষ্ট করেছে এই সূত্র:
(সর্বশেষ মূল বেতন × চাকরির বছরের সংখ্যা × ১৫) ÷ ২৬
এখানে—
- ১৫ = বছরে ১৫ দিনের বেতনের হিসাব
- ২৬ = মাসে মোট ২৬টি কার্যদিবস (রবিবার বাদ)
🔍 একটি উদাহরণ ধরুন
ধরা যাক,
- কর্মীর সর্বশেষ মূল বেতন = ৫০,০০০ টাকা
- চাকরির মেয়াদ = ৯ বছর
সূত্র অনুযায়ী গ্র্যাচুইটি দাঁড়াবে—
(৫০,০০০ × ৯ × ১৫) ÷ ২৬ = ২,৫৯,৬১৫ টাকা
অর্থাৎ, কর্মী চাকরি ছাড়ার সময় পাবেন ২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৬১৫ টাকা।
৬ মাসের নিয়ম: কীভাবে বাড়বে চাকরির বছর?
গ্র্যাচুইটি গণনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম—
✔ ছয় মাসের বেশি সময়কে পূর্ণ ১ বছর ধরা হয়।
অর্থাৎ—
- যদি কেউ ৮ বছর ৭ মাস কাজ করেন → গণনায় ধরা হবে ৯ বছর
- যদি ৮ বছর ৫ মাস কাজ করেন → ধরা হবে ৮ বছর
সরকারি ও বেসরকারি কর্মীদের করছাড়
গ্র্যাচুইটি আয়করের আওতার বাইরে নয়, তবে করছাড় রয়েছে—
✔ বেসরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে
আয়কর আইনের ১০(১০) ধারা অনুযায়ী—
➡ ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গ্র্যাচুইটি করমুক্ত
এর বেশি পেলে সেই অংশে কর প্রযোজ্য।
✔ সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে
➡ গ্র্যাচুইটি সম্পূর্ণ করমুক্ত।
কর্মরত অবস্থায় মৃত্যু হলে কারা পাবেন গ্র্যাচুইটি?
যদি কোনও কর্মীর চাকরিজীবনে মৃত্যু হয়—
➡ সম্পূর্ণ গ্র্যাচুইটি পাবেন পরিবারের সদস্যরা
➡ এটি সাধারণত সম্পূর্ণ করমুক্ত
তবে উত্তরাধিকার নিয়ে ঝামেলা এড়াতে আগেভাগে নমিনি করা অত্যন্ত জরুরি।
দ্রুত গ্র্যাচুইটি না দিলে সুদ দিতে বাধ্য সংস্থা
আইন অনুযায়ী—
✔ অবসর বা চাকরি ছাড়ার তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে গ্র্যাচুইটি দেওয়া বাধ্যতামূলক।
✔ দেরি হলে সংস্থাকে সুদসহ টাকা ফেরত দিতে হবে।
✔ কর্মীদের অধিকার আছে অভিযোগ জানানোর— দোষ প্রমাণ হলে নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে জরিমানা হতে পারে।
গ্র্যাচুইটি আইন— ইতিহাস ও সাম্প্রতিক সংশোধন
১৯৭২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার Payment of Gratuity Act চালু করেছিল।
যে সব সংস্থায় কমপক্ষে ১০ জন কর্মী রয়েছে, সেখানে গ্র্যাচুইটি বাধ্যতামূলক।
আগে—
❌ পাঁচ বছর চাকরি না করলে গ্র্যাচুইটি মিলত না।
এ বার—
✔ মাত্র এক বছর চাকরিতেই গ্র্যাচুইটি
২১ নভেম্বরের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তির পর থেকে এই নতুন নিয়ম কার্যকর হয়েছে।
গ্র্যাচুইটির এই নতুন বিধান কর্মীদের আর্থিক নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি করবে, বিশেষত চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের, যারা এত দিন এই সুবিধা থেকে প্রায় বঞ্চিতই ছিলেন। নতুন নিয়মে গ্র্যাচুইটি যে এখন কর্মসংস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী নিরাপত্তা হয়ে দাঁড়াল— তা বলাই যায়।

