বিজেপির গ্রামমুখী অভিযান!
লোকসভা নির্বাচনে শহুরে কিছু সাফল্য পেলেও বাংলায় বিজেপির জন্য মূল চ্যালেঞ্জ রয়ে গিয়েছে গ্রামীণ ও বস্তি অঞ্চলে। তাই আগামী বিধানসভা ভোটের আগে শহরকেন্দ্রিক নেতানেত্রীদের এবার পাঠানো হচ্ছে গাঁ-গঞ্জে। নাম দেওয়া হয়েছে— ‘গ্রাম চলো’ ও ‘বস্তি চলো’ কর্মসূচি। লক্ষ্য একটাই— মাটির কাছাকাছি গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তাঁদের সমস্যার বাস্তব চিত্র বোঝা।
বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব বুঝে গিয়েছে, শহরেই ভর করে বঙ্গজয় সম্ভব নয়। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ছয়টি আসন কমলেও কলকাতার বাইরের শহরাঞ্চলে তুলনামূলক ভালো ফল করেছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু গ্রামে তৃণমূলই এগিয়ে। সেই ঘাটতি পূরণেই এই বিশেষ উদ্যোগ।
রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, অগ্নিমিত্রা পাল, জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায় সহ একাধিক শীর্ষ নেতা এই অভিযানে নামছেন। দলীয় ‘শক্তিকেন্দ্র’— অর্থাৎ পাঁচটি বুথের সমন্বয়ে গঠিত এলাকায় একেকজন নেতা আট ঘণ্টা সময় কাটাবেন।
কী থাকছে কর্মসূচিতে?
- স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক
- সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ শোনা
- সমস্যার সমাধানের খোঁজ
- গণ্যমান্যদের সংবর্ধনা
- মধ্যাহ্নভোজে কর্মীদের সঙ্গে পংক্তিভোজন
- দিনশেষে উঠোন বৈঠক
এই ‘উঠোন বৈঠক’-এর ঐতিহ্য নতুন নয়। বিজেপি যখন বাংলায় তুলনামূলক ছোট দল ছিল, তখনও গ্রামে গিয়ে সরাসরি মানুষের সঙ্গে কথা বলেই ভোট প্রচার চালাত। সেই পুরনো কৌশলই এবার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
গ্রাম-শহরের চিন্তাভাবনায় ফারাক
তবে এ যাত্রাপথ সহজ নয়। বাংলার গ্রামীণ ও শহুরে দর্শকদের রুচিতে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে— সেটা শুধু সিনেমা বা সংস্কৃতিতেই নয়, রাজনীতিতেও প্রতিফলিত হয়। ‘বেলাশেষে’ শহরে সাড়া ফেললেও গ্রামের মানুষ দেখেননি। আবার দেবের ‘খাদান’ ছবিতে যেভাবে গ্রামীণ দর্শক সাড়া দিয়েছে, শহরের রুচিবান দর্শক ততটাই বিমুখ।
অভিনেতা সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ও স্বীকার করেছেন— “গ্রাম আর শহর এখনও বাংলায় দুটো আলাদা সভ্যতা। শহুরে জীবনে যাঁরা অভ্যস্ত, তাঁদের জীবনদর্শন গ্রামের মানুষের সঙ্গে মেলে না।” এই বিভাজনই বিজেপির বড় চ্যালেঞ্জ।
তবে নেতাদের দাবি— আমরা গ্রাম থেকেই উঠে এসেছি
এই বিতর্কের জবাবে সুকান্ত মজুমদার বলেন, “শহর থেকে গিয়ে গ্রামকে বুঝতে চাইছি— এমন ভাবার কিছু নেই। আমরা নিজেরাও গ্রামের মানুষ। কর্মসূত্রে শহরে আছি, কিন্তু শিকড় গ্রামেই।” তাঁর মতে, শুভেন্দু অধিকারী বা দিলীপ ঘোষ— সকলেই গ্রাম থেকে উঠে আসা রাজনীতিক।
উপসংহার
বাংলার রাজনীতির ময়দানে ‘গ্রাম চলো’ কর্মসূচি বিজেপির জন্য শুধু প্রচার নয়, এক ধরনের আত্মসমীক্ষাও। তারা কতটা এই সাংস্কৃতিক বিভাজন পেরিয়ে সাধারণ মানুষের মন জিততে পারে, সেটাই ঠিক করবে তাদের ভবিষ্যৎ পথচলা।
জয়ী সিংহ ফতেহ্সিন! ৮ বছরের অপেক্ষার পর বাবা হলেন জাহির খান, খুশির হাওয়া লখনউ শিবিরে