Thursday, February 13, 2025

গ্রামের ভোট পাখির চোখ! বাজেটে ৪৪ হাজার কোটি বরাদ্দ, নির্বাচনী অঙ্ক কতটা সফল হবে?

Share

বাজেটে ৪৪ হাজার কোটি বরাদ্দ!

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করেছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। স্বাভাবিক ভাবেই, এই বাজেট যে নির্বাচনী স্বার্থকে সামনে রেখেই তৈরি, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু বাজেটের সবচেয়ে বড় চমক গ্রামের জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দ। এ বারের বাজেটে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন খাতে ৪৪ হাজার ১৩৯ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা অন্য কোনও খাতে এত বেশি বরাদ্দ হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে, গ্রামবাসীদের মন জিততে মরিয়া হয়ে উঠেছে কি তৃণমূল?

গ্রামীণ ভোটেই বাজিমাত?

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯৪টি আসনের মধ্যে প্রায় ১৭০-১৮০টি আসন গ্রামীণ এলাকা কেন্দ্রিক। প্রত্যেক নির্বাচনে এই আসনগুলিই নির্ণায়ক হয়ে ওঠে। তাই বাজেটের ছত্রে ছত্রে গ্রামের উন্নয়নকে সামনে রেখে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে

🔹 পথশ্রী প্রকল্প: গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের জন্য বরাদ্দ ১,৫০০ কোটি টাকা
🔹 বাংলার বাড়ি প্রকল্প: নিম্ন আয়ের পরিবারদের জন্য নতুন ঘর নির্মাণে বরাদ্দ ৯,৬০০ কোটি টাকা
🔹 কৃষিবিভাগে বরাদ্দ: ১০ হাজার কোটি টাকা, যা কৃষকদের উন্নয়নের জন্য ব্যবহৃত হবে।
🔹 স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি বিভাগে বরাদ্দ: ৭৯৮ কোটি টাকা, মহিলাদের কর্মসংস্থানের জন্য বরাদ্দ।
🔹 নদী ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্প (নদী বন্ধন): ২০০ কোটি টাকা
🔹 ৭০ হাজার আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের জন্য স্মার্টফোন: বরাদ্দ ২০০ কোটি টাকা

বিরোধীদের কটাক্ষ: ‘ভোটের জন্য লোক দেখানো বাজেট’

বিরোধীরা এই বাজেটকে “ভোটমুখী” এবং “লোক দেখানো” বলেই কটাক্ষ করছে।
বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,
“এই বাজেট কোনও উন্নয়নের দিশা দেয় না। শুধু নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।”

আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি বলেছেন,
“প্রতি বছর গ্রামোন্নয়ন খাতে টাকা বরাদ্দ হয়, কিন্তু তার কতটা বাস্তবে খরচ হয়, সেটাই বড় প্রশ্ন।”

কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাত এবং তৃণমূলের ‘পাল্টা চাল’

গত কয়েক বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে, যার ফলে রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতি কিছুটা সমস্যায় পড়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজস্ব তহবিল থেকে সেই টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন

এছাড়া ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প চালু করা হয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’-র জবাবে, কারণ কেন্দ্র থেকে রাজ্যের জন্য বরাদ্দ কমে গিয়েছে।

২০২৬ সালের ভোটের আগে গ্রামীণ ঘাঁটি পোক্ত করতে মরিয়া তৃণমূল

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামে তৃণমূলের ভোটব্যাংক অনেক বেশি শক্তিশালী। ২০২৪ সালে আরজি কর হাসপাতালের আন্দোলনের ফলে শহরাঞ্চলে তৃণমূলের জনপ্রিয়তা কিছুটা ধাক্কা খেলেও গ্রামে তার প্রভাব পড়েনি

গত বছর ৬টি উপনির্বাচনের সব ক’টিতে তৃণমূল জয়ী হয়েছে, যা ছিল মূলত গ্রামীণ আসন। তাই এই বাজেটের লক্ষ্য শহরের থেকে বেশি গ্রামকে আকর্ষণ করা

মমতা বলছেন কী?

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বাজেটকে শুধুই গ্রামীণমুখী বলতে রাজি নন। তাঁর মতে,
“গ্রামের অর্থনীতির বিকাশ হলে শহরেরও উন্নতি হবে। আমরা গ্রাম ও শহরের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাতে চাই।”

শেষ কথা

এই বাজেট যে সরাসরি ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। গ্রামীণ ভোটারদের খুশি করতে তৃণমূল সর্বোচ্চ বাজি ধরেছে। তবে প্রশ্ন একটাই— বাজেটে বরাদ্দ অর্থ বাস্তবে কতটা কাজে লাগবে, আর কতটা থেকে যাবে শুধু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হয়ে?

“রাজ্যের বাজেট দিশাহীন!”— এক সুরে আক্রমণ শানালেন শুভেন্দু, নওশাদ ও বাম-কংগ্রেস

Read more

Local News