গোলাপি বলের লড়াই ঘিরে রুট–হেড বাকযুদ্ধ
অ্যাশেজ সিরিজে ব্রিসবেনে দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগেই রীতিমতো উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছে দুই শিবিরে। কারণ একটিই—গোলাপি বলের দিন-রাতের টেস্ট। ইংল্যান্ডের তারকা ব্যাটার জো রুট খোলাখুলি বলেছেন, এই ধরনের টেস্ট ম্যাচের কোনও প্রয়োজনই নেই। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার ট্রেভিস হেড ব্যঙ্গ করে মন্তব্য করেছেন, “ইংল্যান্ড গোলাপি বলে জিততে পারে না বলেই এমন বক্তব্য!” ফলে মাঠে নামার আগেই রুট ও হেডের বাক্যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ।
২০১৫ সালে আইসিসি আনুষ্ঠানিকভাবে দিন-রাতের টেস্টকে অনুমোদন দেয়। তার পর থেকে অস্ট্রেলিয়া যেন গোলাপি বলের পরিপূর্ণ সম্রাট। যে ২৪টি দিন-রাতের টেস্ট হয়েছে, তার মধ্যে ১৩টিই আয়োজন করেছে অস্ট্রেলিয়া, এবং বাড়তি বিস্ময়—সব কটিতেই জয় তাদের দখলে! মোট মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া ১৪টির মধ্যে ১৩টি ম্যাচ জিতেছে। বিপরীতে ইংল্যান্ড সাতটি ম্যাচ খেললেও জয় পেয়েছে মাত্র দু’টিতে, এবং অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তো তিনবার টানা হেরেছে।
এই পরিসংখ্যানে দৃষ্টিপাত করলে বোঝাই যায়, গোলাপি বলের টেস্ট কাকে সুবিধা দেয়। তাই হয়তো রুট সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্পষ্ট জানান, “ব্যক্তিগতভাবে আমার গোলাপি বলের টেস্ট পছন্দ নয়। অস্ট্রেলিয়ায় এর জনপ্রিয়তা এবং সাফল্যের হার বেশি—এ কারণেই এই আয়োজন। কিন্তু সিরিজের গুরুত্ব বিবেচনা করলে, আমার মনে হয় না দিন-রাতের টেস্টের প্রয়োজন রয়েছে। থাকলেও আপত্তি নেই, কিন্তু এর দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।”
রুটের মন্তব্যের পরই হাজির হল ট্রেভিস হেডের কটাক্ষ। তিনি বলেন, “আমরা গোলাপি বলের টেস্টকে স্বাগত জানাই। ক্রিকেটের পণ্যের আকর্ষণ বাড়ায় এটি। দর্শকও উপভোগ করেন। গোলাপি বল, সাদা বল বা লাল বল—এগুলোর রং বদলায়, কিন্তু খেলার উত্তেজনা বদলায় না। ইংল্যান্ড হয়তো সফল না হওয়ার ভয়ে বাদ দেওয়ার যুক্তি দাঁড় করাচ্ছে!”
এখানেই থেমে থাকেননি হেড। তিনি টেস্ট ফরম্যাটের পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, “টি-টোয়েন্টি, টি-টেনের যুগে ফরম্যাটের বৈচিত্র্য বাড়ছে। অথচ টেস্ট ক্রিকেটের কাঠামো একই আছে। শুধু গোলাপি বল ব্যবহারে পরিবেশ বদলায়, কিন্তু খেলার চরিত্র নয়। তাই দিন-রাতের টেস্ট ভবিষ্যতের জন্যও দারুণ।”
এদিকে হেড মাত্র কয়েক দিন আগেই পার্থ টেস্টে ওপেন করে জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন। ভবিষ্যতেও ওপেন করতে তাঁর আপত্তি নেই। মন্তব্য তাঁর, “দলের প্রয়োজনে আমি যেকোনও ভূমিকায় প্রস্তুত। ওপেন করতে হলে তাও করব। এখন ব্রিসবেনে এসে পুরো মনোযোগ ম্যাচে লাগাতে চাই। বিশ্রামের সময় নেই, অবদান রাখাটাই আসল।”
অন্যদিকে ইংল্যান্ড শিবির একটু চাপে। লাল বলের তুলনায় গোলাপি বলের সুইং ও সীম বেশি হয়, যা রাতের সেশনকে কঠিন করে তোলে। ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা বহুবার গোলাপি বলের বিপরীতে সমস্যায় পড়েছেন। ফলে রুটের মন্তব্যকে অনেকেই মনস্তাত্ত্বিক চাপ কাটানোর চেষ্টা বলে ব্যাখ্যা করছেন।
অস্ট্রেলিয়া কিন্তু আত্মবিশ্বাসী। ব্রিসবেনের উইকেট, সূর্যাস্তের সময়ের বাড়তি গতি ও আলো-ছায়ার খেলা—সব মিলিয়ে গোলাপি বল আবার অস্ট্রেলিয়াকেই সুবিধা দেবে বলে মনে করছে ক্রিকেট মহল। দ্বিতীয় টেস্ট তাই শুরু হওয়ার আগেই উত্তাপ ছড়িয়ে দিয়েছে রুট-হেড বাকযুদ্ধ।
এখন দেখার, গোলাপি বলের আসল পরীক্ষায় কার হাসি ফোটে—সমালোচক রুট-এর না আত্মবিশ্বাসী হেড-এর।

