Monday, December 1, 2025

‘গুরুতর অসুস্থ’ আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেই! ইরানে পরবর্তী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হওয়ার দৌড়ে কে? রয়েছে চোরাস্রোতও

Share

অসুস্থ খামেনেই

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বর্তমানে ৮৫ বছর বয়সী খামেনেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, যা ইরানের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। ইজরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাতের মাঝে, দেশটির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সম্পর্কে আলোচনা শুরু হয়েছে, এবং এমন প্রশ্ন উঠেছে— পরবর্তী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা কে হতে পারেন।

খামেনেইয়ের শারীরিক অবস্থা

সম্প্রতি ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, খামেনেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার কারণে ভুগছেন। তিনি বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর ফলে ইরানের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চিন্তার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের শীর্ষনেতা যদি অচল হয়ে পড়েন, তাহলে কে তাঁর উত্তরসূরি হবেন? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে দেশটির জনমনে।

মোজতবা খামেনেই: সম্ভাব্য উত্তরসূরি

আয়াতোল্লা খামেনেইয়ের দ্বিতীয় পুত্র মোজতবা খামেনেইয়ের নাম অনেকের মুখে শোনা যাচ্ছে পরবর্তী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হিসাবে। তবে তাঁর বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহও রয়েছে। মোজতবার বয়স ৫৫, এবং তিনি সাধারণত প্রকাশ্যে খুব কমই দেখা দেন। কিন্তু ইরানের রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব অপরিসীম। খামেনেইয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তাঁর রাজনীতিতে যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং কট্টরপন্থী নেতা ইব্রাহিম রইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর থেকেই মোজতবা সম্পর্কে আলোচনা শুরু হয়েছে। রইসি খামেনেইয়ের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং তাঁর মৃত্যুর আগে পরবর্তী নেতা হিসাবে রইসির নাম উঠে এসেছিল। তবে রইসির মৃত্যুর পর মোজতবার নামই প্রধান আলোচনার কেন্দ্রে।

অসন্তোষের স্রোত

তবে খামেনেইয়ের শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগের পাশাপাশি মোজতবা খামেনেই সম্পর্কে কিছু অসন্তোষও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিছু রাজনৈতিক দল এবং বিশ্লেষক মনে করেন, মোজতবার নেতৃত্বে ইরান সঠিক পথে যাবে না। তাঁদের মধ্যে রয়েছে বিভ্রান্তি ও বিরোধিতা। ফলে, পরবর্তী ধর্মীয় নেতা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা অন্দরে ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠছে।

এছাড়া, খামেনেইয়ের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। ইরানে এমন কিছু পক্ষ রয়েছে যারা মনে করছেন, নতুন নেতা নির্বাচনের সময় এসেছে। তাঁরা কেবল মোজতবা খামেনেইয়ের নামেই ক্ষান্ত থাকতে চান না।

নিরাপত্তা পরিস্থিতি

গত মাসে ইজরায়েলি হামলায় হিজবুল্লার প্রধান সৈয়দ হাসান নাসরাল্লার মৃত্যু ঘটলে ইরানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ে। এই ঘটনার পরই ইরান সরকার চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করে। খামেনেইকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কথা শোনা গেছে। একাধিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, এই নিরাপদ স্থানে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অক্টোবরের শুরুতে, খামেনেই তেহরানে একটি জুম্মার নমাজের খুতবায় অংশগ্রহণ করেন এবং ইজরায়েলকে হুঁশিয়ারি দেন। এ সময় তাঁর উপস্থিতি দেখে বোঝা যায় যে তিনি কোনওভাবে গোপনে লুকিয়ে নেই, বরং জনগণের সামনে আসার মাধ্যমে তিনি নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছেন।

ভবিষ্যতের দিকে নজর

এখন দেখা যাচ্ছে, খামেনেইয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে ইরানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরানের পরবর্তী ধর্মীয় নেতার নির্বাচন দেশের ভিতরের রাজনৈতিক মহল এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলবে।

কীভাবে এবং কখন এই নির্বাচন হবে, তা নিয়ে এখন থেকেই বিভিন্ন দলের মধ্যে চোরাস্রোত দেখা দিয়েছে। মোজতবা খামেনেই, যদি সত্যিই নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করেন, তাহলে কীভাবে তিনি অন্য নেতাদের সঙ্গে সংঘাত মোকাবিলা করবেন, সেটিও প্রশ্নের উদ্রেক করছে।

উপসংহার

ইরানের রাজনৈতিক দুনিয়া এখন এক পরিবর্তনশীল অবস্থানে রয়েছে। খামেনেইয়ের শারীরিক অবস্থা দেশের রাজনৈতিক পর Landscape তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ভবিষ্যতে কে হবেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা, তা নিয়ে যা চলছে, তা শুধু ইরানের নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশে অস্থিরতার মধ্যেও নেতৃত্বের পরিবর্তন যে বিষয়টি নিয়ে চর্চা চলছে, সেটাই ইরানের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থানকে প্রতিফলিত করে।

Read more

Local News