Friday, May 16, 2025

গালিগালাজ আর গোঁড়া পুরুষতন্ত্রে ঢাকা পড়ল ‘লজ্জা ২’— আদৌ কী বার্তা দিল এই সিরিজ?

Share

গালিগালাজ আর গোঁড়া পুরুষতন্ত্রে ঢাকা পড়ল ‘লজ্জা ২’

লজ্জা ২’— এক নারীকেন্দ্রিক গল্প বলেই যে সমর্থনযোগ্য হয়ে ওঠে, তা নয়। বরং এই সিজ়ন জুড়ে প্রশ্ন থেকেই যায়, নারীর আত্মপ্রতিষ্ঠার লড়াই আদৌ কতটা বিশ্বাসযোগ্যভাবে দেখানো হলো?

প্রথমেই বলে রাখা ভালো, ‘লজ্জা’ ওয়েব সিরিজ়ের দ্বিতীয় সিজ়নেও রয়ে গেছে আগের মতো অতিরিক্ত মেলোড্রামা, অকথ্য গালিগালাজ আর অনাবশ্যক দীর্ঘতা। প্রধান চরিত্র জয়ার কাহিনি একদিক থেকে সাহসী—একজন গৃহবধূর আত্মপরিচয়ের খোঁজ, কিন্তু চিত্রনাট্যের দুর্বলতা এবং অপ্রাসঙ্গিক দৃশ্য সেই মূল বার্তাটিকেই ফিকে করে দিয়েছে।

গল্প শুরু হয় জয়ার উকিল বন্ধু শৌর্যের আকস্মিক মৃত্যুকে ঘিরে। থানায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় থেকেই জয়ার উপর শুরু হয় সামাজিক অপমানের সুনামি। পুলিশের অশালীন আচরণ, স্বামী পার্থর অকথ্য ভাষা, আর হোটেলের বাগানে লোকজ বিচারসভা—সব মিলিয়ে এক অস্বস্তিকর পরিসর। পার্থ চরিত্রটি যেন শুধুই গালিগালাজের প্রতিমূর্তি। সেইসঙ্গে শৌর্যের স্ত্রী স্নেহার আচরণও প্রশ্ন তোলে—ডিভোর্সের পথে থেকেও তাঁর মূল চিন্তা স্বামীর পরকীয়া!

এই সিরিজের বড় দুর্বলতা হলো—এটি শুধুমাত্র গালিগালাজ আর নারীর অবমাননার মধ্যে পুরুষতন্ত্রের দাপট দেখিয়েছে, কিন্তু সেই দাপটের প্রতিবাদে জয়ার ভিতরের উত্তরণ, তার ‘নারী হয়ে বাঁচা’র লড়াই—তা যেন একঘেয়ে বিষণ্নতায় ঢাকা পড়ে গেছে। অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা সরকারের অভিনয়কেও তেমন জোরালো মনে হয়নি।

তবে কিছু চরিত্র এই ধোঁয়াশার মধ্যে উজ্জ্বল। দীপঙ্কর দে’র আইনজীবী চরিত্রে প্রত্যাবর্তন, এবং কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাইকোলজিস্টের চরিত্রটি যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য। বিশেষ করে জয়ার সঙ্গে মেয়ের পুনর্মিলনের মুহূর্তটি আবেগঘন ও সফলভাবে মাতৃত্বের ব্যাখ্যা দেয়।

চিত্রনাট্য যেখানে খারাপ হয়েছে, তা হলো—নারীর মানসিক অবসাদ ও সামাজিক অবহেলাকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে বাস্তবতা হারিয়ে গেছে। জয়ার জীবনযাত্রার হঠাৎ পরিবর্তন, নিজের গাড়ি ড্রাইভ করে মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া—এই পরিবর্তন শুধুই কাউন্সেলিংয়ের কারণে সম্ভব, এমনটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।

সিরিজের আবহসঙ্গীত ভালো, রবীন্দ্রসঙ্গীতের ব্যবহার যথাযথ। তবে ‘লজ্জা’ নামটির সঙ্গে যেটুকু আশা জড়িয়ে থাকে, তা এই সিজ়ন তেমনভাবে পূরণ করতে পারেনি।

একটা বড় প্রাপ্তি অবশ্যই—কাহিনিকার দেখাতে পেরেছেন, ‘মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু’ এই প্রবচনের ভুলটা। জয়ার বোন টিয়া এবং আইনজীবী স্নেহার দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে এক নতুন ব্যাখ্যা।

তবে সব মিলিয়ে, ‘লজ্জা ২’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সিরিজ হলেও, উপস্থাপনায় খামতি থাকায় তা দর্শকের মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলতে ব্যর্থ। একটু সংযত চিত্রনাট্য ও বাস্তবসম্মত উপসংহার সিরিজটিকে অনেক বেশি প্রভাবশালী করে তুলতে পারত।

এসএসসি নিয়োগে আসছে বড় পরিবর্তন: পরীক্ষার্থীরা এবার উত্তরপত্রের কার্বন কপি পাবেন!

Read more

Local News