গাধা বেচে অর্থনীতি চাঙ্গা করবে পাকিস্তান!
পাকিস্তানের অর্থনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতি, চারদিকে ঋণের বোঝা, আর এই সংকট কাটাতে এবার ‘গাধা রফতানির’ নতুন পথ খুঁজেছে ইসলামাবাদ! বালুচিস্তানের গ্বদর বন্দরে দেশের প্রথম গর্দভ কসাইখানা খুলেছে পাকিস্তান সরকার। মূল উদ্দেশ্য? ‘বন্ধু’ চিনের চাহিদা মেটানো!
এই কসাইখানায় লাখ লাখ গাধা জবাই করে তাদের মাংস, চামড়া ও অস্থি চিনে রফতানি করা হবে। বিশেষ করে ‘এজিয়াও’ নামে এক ধরনের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় গর্দভ চর্মের আঠা, যা চীনে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
চিনের বাজার ধরতে গাধার ব্যবসা! পাকিস্তানের নতুন কৌশল
পাকিস্তান সরকার ইতিমধ্যেই বেজিংয়ের সঙ্গে গাধার চামড়া ও অন্যান্য উপজাত দ্রব্য রফতানির জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। জানা গেছে, প্রতি বছর তিন লক্ষেরও বেশি গাধার চামড়া রফতানি করবে ইসলামাবাদ। এই কসাইখানা তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ লাখ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫৮ কোটি টাকা)।
কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এই কসাইখানার নিয়ন্ত্রণ থাকবে না পাকিস্তানের হাতে! এটি পরিচালনা করবে চীনের ‘হ্যাংগেং ট্রেড কোম্পানি’। অর্থাৎ পাকিস্তান শুধু গাধা সরবরাহ করবে, আর বাকি লাভের বড় অংশ নিয়ে যাবে চিন।
কেন এত চাহিদা গাধার চামড়ার?
চীনের বাজারে ‘এজিয়াও’ নামক এক প্রকার ওষুধের কদর প্রচুর। বলা হয়, এটি রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এই ওষুধের মূল উপাদান তৈরি হয় গাধার চামড়ার আঠা থেকে।
১৯৯০-এর দশক থেকেই চীনে গাধার সংখ্যা কমতে শুরু করে। এক সময় সেখানে প্রায় ১.১ কোটি গাধা ছিল, যা এখন কমে মাত্র ২ লক্ষে নেমে এসেছে। ফলে গাধার জোগান দিতে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের দিকে ঝুঁকেছে বেজিং।
গাধা ‘জবাইয়ের কারখানা’ নিয়ে শুরু বিতর্ক!
এই নতুন কসাইখানা ঘিরে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক।
✅ ইসলামিক রীতিতে গাধাকে ‘পবিত্র পশু’ হিসেবে গণ্য করা হয়। ফলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে এভাবে গণহারে গাধা হত্যা নিয়ে উঠেছে নৈতিক প্রশ্ন।
✅ গরিব পাকিস্তানি কৃষকরা গাধা পরিবহনের কাজে ব্যবহার করেন। তাদের আশঙ্কা, এভাবে বাণিজ্যিকভাবে গাধা জবাই শুরু হলে পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।
✅ পরিবেশবিদদের মতে, অতিরিক্ত গাধা হত্যা করলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে।
এমনকি, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ‘ডাঙ্কি স্যাঙ্কচুয়ারি’ নামে একটি ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর প্রায় ৫৯ লাখ গাধা শুধু চীনের ওষুধ শিল্পের জন্য জবাই করা হয়। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে গাধা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে!
গ্বদর বন্দর কি পাকিস্তানকে চীনের ‘ঋণ-ফাঁদে’ আরও জড়াবে?
এই গর্দভ কসাইখানার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি পাকিস্তানকে আরও বেশি চীনের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার পরিকল্পনার অংশ।
গ্বদর বন্দর পাকিস্তানের ‘চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (CPEC)’ প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশ্লেষকদের দাবি, পাকিস্তান এখন চীনের অর্থনৈতিক উপনিবেশে পরিণত হচ্ছে। কারণ:
✅ CPEC-এর নামে পাকিস্তানে ৫০০০ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে চীন।
✅ বালুচিস্তানের স্থানীয় জনগণ বেজিংয়ের আধিপত্য নিয়ে ক্ষুব্ধ। তারা মনে করেন, এই প্রকল্পের কারণে বালুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করছে চীন।
✅ ইতিমধ্যেই পাকিস্তানে চীনা ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ সেনাবাহিনী গঠন করা হয়েছে।
এই অবস্থায়, গাধার কসাইখানা কি পাকিস্তানকে আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি দেবে, নাকি আরও বড় ‘ঋণ-ফাঁদে’ ফেলে দেবে? এ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ: গাধা রফতানিই কি শেষ ভরসা?
দেশের অর্থনীতি ধুঁকছে, ডলারের রিজার্ভ ফুরিয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে গাধা রফতানির মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান। কিন্তু এই ব্যবসা কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে?
অনেকে মনে করছেন, এতে সাময়িক লাভ হলেও দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতির মুখে পড়বে পাকিস্তান। কারণ, একবার গাধার সংখ্যা কমে গেলে এই ব্যবসাও মুখ থুবড়ে পড়বে।
শেষমেশ, একটা কথাই স্পষ্ট— পাকিস্তান এখন এমন এক পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে, যেখানে দেশ বাঁচাতে গাধাও বিক্রি করতে রাজি!
শুরুতেই ছন্দহীন শামি, এক ওভারে ১১ বল! বুমরাহের রেকর্ড ভাঙলেন বাংলার পেসার