গাজার রক্তাক্ত শৈশব!
গাজার আকাশে যেন থামছেই না বারুদের গন্ধ, আর মাটিতে পড়ে থাকছে নিষ্পাপ শিশুদের রক্ত। ইজ়রায়েলি সেনা অভিযানে আবারও প্রাণ যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের, আর সেই তালিকার সবচেয়ে করুণ অংশ—শিশুদের মৃত্যু। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট জানাচ্ছে, গাজায় প্রতিদিন গড়ে ১০০ প্যালেস্টাইনি শিশু নিহত বা গুরুতর আহত হচ্ছে। শুধু সংখ্যা নয়, এই তথ্যের পেছনে লুকিয়ে রয়েছে কত শত ছিন্নভিন্ন স্বপ্ন, অসমাপ্ত শৈশবের গল্প।
যুদ্ধবিরতির পর ভয়ংকর রূপ
মার্চের গোড়াতেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে নতুন করে হামাস বিরোধী অভিযান শুরু করে ইজ়রায়েল। এর পর থেকেই গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের আগুন যেন আরও ভয়ংকর রূপ নেয়। একের পর এক বোমা পড়ছে স্কুল, হাসপাতাল, ঘরবাড়িতে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিরপরাধ শিশু ও পরিবারগুলো।
ইউএনআরডব্লিউএ (UNRWA)—রাষ্ট্রপুঞ্জের প্যালেস্টাইনি শরণার্থী সংক্রান্ত সংস্থা জানিয়েছে, গত ১৮ মার্চ থেকে প্রতিদিন অন্তত ১০০টি শিশু হয় নিহত হচ্ছে, নয়তো আজীবনের মতো গুরুতর আহত হয়ে পড়ছে।
শিশুদের হারিয়ে যাওয়া শৈশব
এই শিশুরা কারা? কেউ হয়তো মাত্র স্কুলে যেতে শুরু করেছিল, কেউ আবার মায়ের কোলে ঘুমোচ্ছে—কোনওটাই স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে না। কারণ গাজার শিশুরা আজ যুদ্ধের বাস্তব মুখোমুখি। তাদের খেলনা এখন বিস্ফোরণের আওয়াজ, তাদের স্কুল এখন ধ্বংসস্তূপ, আর তাদের স্বপ্ন—বারবার কুঁচকে যাচ্ছে ধূলিমলিন ভবনের নিচে।
নেতানিয়াহুর ‘মিশন’ এবং রাফার দিকেই দৃষ্টি
ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, হামাস ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। একে একে গাজার উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণের খান ইউনিস অঞ্চলকে প্রায় ধ্বংস করে এবার তাঁর লক্ষ্য গাজার দক্ষিণতম শহর রাফা। এই শহরে রয়েছে হাজার হাজার গৃহহীন শরণার্থী, যারা ইতিমধ্যেই ঘর হারিয়ে প্রাণ বাঁচাতে এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এখন রাফাতেও শুরু হতে চলেছে স্থল অভিযান, আর তাতে প্রাণহানির আশঙ্কা আরও বেড়েছে।
শিশুদের জীবন কি কোনও কিছুর চেয়েও মূল্যহীন?
একটি জাতির ভবিষ্যৎ যদি হয় তার সন্তানরা, তবে গাজায় সেই ভবিষ্যৎ আজ ধ্বংসের মুখে। যুদ্ধের কড়া নীতির আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে মানবতা। কী অপরাধ ছিল সেই শিশুর, যে খেলতে খেলতে মরল বোমার টুকরোয়? কী অপরাধ ছিল সেই মেয়েটির, যে খোলা মাঠে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে রইল?
শেষ কথা
বিশ্ব আজ উন্নয়ন, প্রযুক্তি, শান্তি—এই শব্দগুলো নিয়ে গর্ব করে, কিন্তু গাজার শিশুদের কান্না যেন সেই সব শব্দকে নিরব করে দেয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট শুধুই একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি একটি গোটা প্রজন্মের আর্তনাদ। এখন সময় এসেছে—শুধু রাজনৈতিক লাভের হিসাব নয়, বরং মানবতার সুরে কথাবার্তা শুরু হোক। কারণ, প্রতিটি শিশুর জীবন অমূল্য—তা সে গাজায় হোক, কিংবা যে কোনও প্রান্তে।
ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’ ঘোষণার অপেক্ষায় বিশ্ব, ভারতের চিন্তা বাড়ছে!