গাঁজার বাক্সে আলো, থিম ‘অপারেশন সিঁদুর’!
শ্রাবণ মাস এলেই পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় শুরু হয় তারকেশ্বর হন্টন। এক সময় শুধুই শিবভক্তির উদ্দেশ্যে শুরু হওয়া এই যাত্রা, আজ যেন এক বিশাল কার্নিভালের চেহারা নিয়েছে। বদল এসেছে ধরণে, গানে, সাজে, এমনকি স্লোগানেও।
শনিবার রাত। হাওড়া-ব্যান্ডেল লোকালের একটি বগি পরিণত হয়েছে ‘ভক্তি-ট্রেনে’। কিন্তু তাতে ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে ট্রেনের ‘ধূমপান নিষেধ’ ঘোষণাও। চল্লিশ জনের একটি দল গাঁজার বাক্স সামনে রেখে গান-বাজনায় মেতে উঠেছে। বাক্সে শোভা পাচ্ছে টেরাকোটার শিবমূর্তি, চারপাশে টুনি বাল্বের ঝিলিক। তাঁরা এসেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘুঁটিয়ারি শরিফ থেকে।
রবিবার দুপুরে শেওড়াফুলিতে একই ছবি। গাঁজার নেশা, ব্লু টুথ বক্সে বাজছে ‘আমাকু সাইড দিও রে’, সঙ্গে উদ্দাম নাচ। সিভিক ভলান্টিয়ার সরাতে এসে ব্যর্থ। কারণ এখন শ্রাবণের হন্টন মানেই এক অন্যরকম আমেজ— ভক্তি আর ফূর্তির অদ্ভুত মিশেল।
আরও চমক এনে দিয়েছে এ বছরের এক নতুন থিম— ‘অপারেশন সিঁদুর’। ভ্যানে তোলা একটি থিম-ভ্যানের মাথায় যুদ্ধবিমান, ভারতীয় সেনার ছবি আর এক মহিলার মুখে লাল সিঁদুর। শ্রাবণযাত্রায় এই থিমের আবির্ভাব যেন এক নতুন ধারার সূচনা।
শ্রাবণযাত্রার বদল অবশ্য আজকের নয়। আগেও দেখা গিয়েছে প্লাস্টিক ঘটের রমরমা, রথে মূর্তি নিয়ে যাওয়ার হিড়িক। তবে এবার তা যেন আরও বর্ণময়। এবার দেখা যাচ্ছে হনুমানের মূর্তি, বজরংবলীর পতাকা, এমনকি নতুন নতুন স্লোগান—
- “রাস্তায় রাস্তায় বাম্পার, বাবার কত টেম্পার”
- “জল নিয়েছি ঘটে, বাবা যেন পটে”
- “জয় মা তারা, জয় মা কালী, আমরা হলাম বাবার শালি!”
কিছু স্লোগান নিছক মজা হলেও, কিছু কিছু ছিল উস্কানিমূলক।
তবে বদল শুধু স্লোগানে নয়। এবার আরও বেশি সংখ্যায় দেখা যাচ্ছে রূপান্তরকামী বা তৃতীয় লিঙ্গের পুণ্যার্থী। সমাজের আরও বেশি স্তরের মানুষ এই যাত্রায় যুক্ত হচ্ছেন।
হুগলির স্থানীয় ব্যবসায়ী সঞ্জয় ঘোষের কথায়, “এখন হন্টন মানে যেন কার্নিভাল। শুধু ভক্তি নয়, একটা উৎসবের মেজাজ।”
অর্থনীতির দিক থেকেও এর প্রভাব স্পষ্ট। হোটেল-রেস্তোরাঁয় ভিড়, নতুন খাবারের মেনু— সবই বলছে, এই যাত্রা অনেকের অতিরিক্ত রোজগারের সুযোগ। যেমন সিঙ্গুরে সয়াবিন বিরিয়ানি আর আলুর দমে তৃপ্ত হয়েছেন তিন হাজারেরও বেশি ভক্ত।
যাত্রার সময় রাজনীতিও থাকে তার ছাপ রেখে— তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস জল বিলিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়। একমাত্র বামেদের দেখা মেলে না।
শ্রাবণের তারকেশ্বর যাত্রা নিয়ে এক সময় তৈরি হয়েছিল বিখ্যাত ছবি ‘বাবা তারকনাথ’ (১৯৭৭)। সেসময়ে যেখানে স্ত্রীর ত্যাগ আর বিশ্বাস ছিল মূল বিষয়, আজকের যাত্রা যেন এক নতুন পরিচয়ের খোঁজে এগিয়ে চলেছে— যেখানে ভক্তি আর ফূর্তি পাশাপাশি হাঁটে।
ঘন ঘন প্রস্রাব নয়, আরও অনেক উপসর্গ জানান দিতে পারে ডায়াবিটিস! কী ভাবে বুঝবেন?

