Friday, January 31, 2025

গর্ভপাত নিয়ে আমেরিকায় বর্তমান সংকট: কীভাবে নির্বাচনী সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে?

Share

গর্ভপাত নিয়ে আমেরিকায় বর্তমান সংকট

২০২২ সাল থেকে আমেরিকায় গর্ভপাত সংক্রান্ত আইন নিয়ে গভীর রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হয়েছে, যা আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রভাবশালী ইস্যু হিসেবে উঠে এসেছে। সুপ্রিম কোর্টের এক ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে গর্ভপাতের অধিকার খর্ব হওয়ায় দেশজুড়ে গর্ভপাত নিয়ে নানা বিধিনিষেধ আরোপিত হয়, যা নারীদের অধিকার ও স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এই সমস্যাটি মার্কিন ভোটারদের মনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলছে, বিশেষত নির্বাচনী প্রচারণায় যেখানে প্রার্থীরা তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।

আইনগত পরিবর্তন ও নারীদের ওপর প্রভাব

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর আমেরিকার অন্তত ১৩টি প্রদেশে কড়া গর্ভপাত বিরোধী আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থার পুরো সময় জুড়ে গর্ভপাত নিষিদ্ধ এবং শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। আরও কয়েকটি প্রদেশে ছয় সপ্তাহ পরে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা অনেক নারী গর্ভধারণ সম্পর্কে জানার আগেই কার্যকর হয়ে পড়ে। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো নারীদের অধিকার খর্ব করার অভিযোগে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

গর্ভপাত বিতর্ক নির্বাচনে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই ইস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের মধ্যে অনুষ্ঠিত বিতর্কসভাতেও গর্ভপাত নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। ট্রাম্প গর্ভপাতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কট্টর আইন প্রণয়নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, যা সমর্থনকারীদের কাছে একটি নৈতিক বিষয়। অপরদিকে, হ্যারিস নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ও স্বাধীনতার পক্ষে জোর দিয়েছেন। হ্যারিস কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং গর্ভপাতের অধিকারকে একটি মানবাধিকার হিসেবে তুলে ধরেছেন।

নির্বাচনী সমীক্ষায় গর্ভপাত সংক্রান্ত প্রভাব

বুথফেরত সমীক্ষাগুলোর ফলাফলে দেখা গেছে, আমেরিকানদের মধ্যে একটি বড় অংশ এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে তাদের ভোট দিয়েছেন। বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে, প্রায় ৫ শতাংশ ভোটার গর্ভপাতের অধিকারকে তাদের ভোটের প্রধান বিবেচ্য বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এ কারণে গর্ভপাত ইস্যুটি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব

গর্ভপাত নিষেধাজ্ঞার কারণে বিভিন্ন প্রদেশে নারীদের নিরাপদ গর্ভপাতের জন্য বড়ি এবং অন্যান্য বিকল্প পদ্ধতির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও গোপনে গর্ভপাতের সংখ্যা বাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব পরিবর্তনের ফলে নারীরা তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য ও স্বাধীনতার প্রশ্নে অধিক সংবেদনশীল হচ্ছেন এবং রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হচ্ছেন।

এবারের নির্বাচনে গর্ভপাত সংক্রান্ত আইনি পরিবর্তন কীভাবে নারীদের ভবিষ্যত অধিকার সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবে, তা নিয়ে অনেক ভোটারই উদ্বিগ্ন। এটি নিশ্চিত যে এই ইস্যুটি নির্বাচনের পরে আরও বেশি গুরুত্ব পাবে এবং আইনসভার মাধ্যমে পরিবর্তনের জন্য চাপ সৃষ্টি করবে।

Read more

Local News