Friday, January 31, 2025

গম্ভীর জোর দিচ্ছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে, কিন্তু লাভ কি আদৌ হবে? চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল নির্বাচন নিয়ে নতুন প্রশ্ন

Share

গম্ভীর জোর দিচ্ছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে!

জাতীয় দলে জায়গা পেতে গেলে একজন খেলোয়াড়কে ঠিক কী করতে হয়? করুণ নায়ার যদি নিজেকে এই প্রশ্ন করেন, তার উত্তর কী হবে? কারণ, ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন নজরকাড়া পারফরম্যান্স করেও তিনি জায়গা পেলেন না।

ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার প্রয়োজনীয়তার কথা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বহুবার বলেছে। প্রাক্তন সচিব জয় শাহ এবং কোচ গৌতম গম্ভীর এই বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে করুণ নায়ারের মতো একজন ক্রিকেটারের ঘরোয়া পারফরম্যান্স যদি দল নির্বাচনে প্রভাব না ফেলে, তাহলে প্রশ্ন উঠবেই—ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলা কি আদৌ কোনো কাজে আসে?

ঘরোয়া ক্রিকেটে করুণ নায়ারের অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স

বিজয় হজারে ট্রফিতে করুণ নায়ারের পারফরম্যান্স যে কোনো মানদণ্ডে অসাধারণ। সাতটি ইনিংসে মাত্র একবার আউট হয়ে তিনি ৭৫২ রান করেছেন। অপরাজিত ১১২, অপরাজিত ৪৪, অপরাজিত ১৬৩, অপরাজিত ১১১—এমন ধারাবাহিকতা ঘরোয়া ক্রিকেটে বিরল। শুধু বিদর্ভ দলকেই ফাইনালে তুলতে নয়, ঘরোয়া ক্রিকেটের ইতিহাসে নিজের নামও চিরস্থায়ী করেছেন করুণ।

এমন পারফরম্যান্সের প্রশংসা করতে পিছপা হননি সচিন তেন্ডুলকরও। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, “সাত ইনিংসে পাঁচটি শতরান, ৭৫২ রান—এটা কোনো সাধারণ কীর্তি নয়। কঠোর পরিশ্রম এবং নিখুঁত মনোযোগ ছাড়া এ ধরনের সাফল্য সম্ভব নয়। করুণ, এইভাবেই এগিয়ে যাও এবং প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগাও।”

অন্যদিকে, হরভজন সিংহ করুণকে দলে না নেওয়ায় কটাক্ষ করে বলেন, “একেকজনের জন্য একেক রকম নিয়ম হওয়া উচিত নয়। নায়ার যখন এত ভালো খেলছে, তখন তাকে দলে না নেওয়ার কোনো কারণ নেই। ও কি কঠোর পরিশ্রম করে না? ওর কি শুধুই দোষ যে সে শরীরে ট্যাটু পরে না বা স্টাইলিশ পোশাক পরে না?”

গম্ভীর

নির্বাচক কমিটির বক্তব্য: আশার কথা না হতাশার?

করুণকে দলে না নেওয়ার বিষয়ে নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকর বলেন, “ওকে বাদ দেওয়া খুব কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। এমন অসাধারণ পারফরম্যান্স উপেক্ষা করা সহজ নয়। আমরা করুণের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে এই মুহূর্তে দলে ওর জন্য জায়গা বের করা খুব কঠিন। যাদের নেওয়া হয়েছে, তাদের গড়ও ৪০-এর ওপরে।”

তবে এই মন্তব্য অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। করুণের মতো একজন ব্যাটসম্যান, যিনি ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন, তাকে কেন অপেক্ষা করতে হবে অন্য কারও ফর্ম হারানোর জন্য বা চোট পাওয়ার জন্য?

যশস্বী জয়সওয়াল এবং শ্রেয়স আয়ারের মতো ব্যাটসম্যান দলে জায়গা পেয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, যখন করুণ এত ভালো ফর্মে, তখন তাকে বাদ দিয়ে কেন এমন খেলোয়াড়কে জায়গা দেওয়া হলো, যিনি সীমিত ওভারের ফরম্যাটে তেমন অভিজ্ঞ নন?

ঘরোয়া ক্রিকেটের গুরুত্ব কি স্রেফ কথার কথা?

জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফরম্যান্স যে সবসময় যথেষ্ট নয়, করুণ নায়ারের ক্ষেত্রেই সেটা প্রমাণিত। বোর্ডের পক্ষ থেকে সিনিয়র ক্রিকেটারদের ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সেই পারফরম্যান্সকে যদি মূল্যায়ন না করা হয়, তাহলে সেই নির্দেশের মানে কী?

একজন সমর্থক টিপ্পনী কেটে বলেছেন, “এবার হয়তো করুণকে পিআর এজেন্সি ভাড়া করতে হবে। না হলে জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।”

উপেক্ষার ইতিহাস: করুণের জন্য নতুন নয়

টেস্ট ক্রিকেটে একবার ৩০০ রান করার পরেও করুণ নায়ার পরের ম্যাচে বাদ পড়েছিলেন। সেই থেকে তার উপেক্ষার ইতিহাস দীর্ঘ। বিজয় হজারে ট্রফিতে এমন অসাধারণ পারফরম্যান্সের পরেও করুণের দলে জায়গা না পাওয়া দেখিয়ে দেয়, ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সের বাইরেও জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্য বিষয় বিবেচনা করা হয়।

শেষ কথা

ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের প্রতিভার সেরা প্রমাণ দেওয়ার পরেও করুণ নায়ারের দলে জায়গা না পাওয়া কেবল তার জন্য নয়, ভারতের ক্রিকেট নীতির জন্যও প্রশ্ন তুলে দেয়। ঘরোয়া পারফরম্যান্স যদি জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার মানদণ্ড না হয়, তাহলে তা খেলোয়াড়দের উৎসাহ কমাবে। গম্ভীর ঘরোয়া ক্রিকেটকে গুরুত্বপূর্ণ বলে ঘোষণা করলেও করুণের ঘটনা যেন বোর্ডের বক্তব্যের বিপরীত ছবি দেখায়।

শাক-সব্জি দিয়ে তৈরি সবুজ রস: রোজ খেলে স্বাস্থ্য ভালো হবে, না কি উল্টো ফল?

Read more

Local News