Monday, December 1, 2025

গন্তব্যে পৌঁছনোর নতুন সংজ্ঞা: শব্দভেদী বিমানের যুগে আমেরিকা

Share

শব্দভেদী বিমানের যুগে আমেরিকা!

পলক ফেলার আগেই গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া—কল্পনাই যেন বাস্তব হতে চলেছে। আমেরিকার স্টার্টআপ সংস্থা ‘হার্মিয়াস’ এমনই এক উচ্চগতির যাত্রিবাহী হাইপারসোনিক বিমান তৈরির পথে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি তারা সফলভাবে তাদের ‘কোয়ার্টারহর্স এমকে ১’ প্রোটোটাইপের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে।

হাইপারসোনিক প্রযুক্তি: ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক

‘হাইপারসোনিক’ বলতে বোঝানো হয় শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ দ্রুতগতির গমন। এত দিন এই প্রযুক্তি শুধুমাত্র সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতো, বিশেষ করে ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমানে। এবার এই প্রযুক্তিকে বেসামরিক ব্যবহারে নিয়ে আসতে চায় ‘হার্মিয়াস’। তাদের লক্ষ্য, সবার জন্য দ্রুত ও কার্যকর যাত্রার সুযোগ তৈরি করা।

সফল পরীক্ষার পথে হার্মিয়াস

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ক্যালিফোর্নিয়ার এডওয়ার্ড এয়ার ফোর্স বেসে সফলভাবে ‘কোয়ার্টারহর্স’ প্রোটোটাইপের পরীক্ষা চালানো হয়। সংস্থাটির সিইও এজে পিপলিকা জানিয়েছেন, মাত্র ২০৪ দিনের মধ্যে প্রোটোটাইপটি তৈরি করা হয়েছে। বিমানটির আকৃতি কিছুটা ইংরেজি ‘U’ অক্ষরের মতো, যা দ্রুতগতির জন্য আদর্শ।

চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি

এত দ্রুত গতির বিমান তৈরিতে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষত, উচ্চগতিতে অবতরণ করা অত্যন্ত কঠিন। ঘর্ষণজনিত সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে। তাই নিরাপদ অবতরণ নিশ্চিত করতে নকশায় কিছু পরিবর্তন আনা হতে পারে।

গতি ও সক্ষমতা

বর্তমান প্রোটোটাইপের পরীক্ষায় কেবলমাত্র ট্যাক্সি টেস্ট চালানো হয়েছে, যেখানে এটি ভূমির ওপর দ্রুতগতি অর্জন করেছে। তবে পরবর্তী ধাপে উড্ডয়ন এবং অবতরণ পরীক্ষা করা হবে। আরও একটি উন্নত সংস্করণ নির্মাণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছে ‘হার্মিয়াস’। আশা করা হচ্ছে, এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে সেই প্রকল্পও সফলভাবে সম্পন্ন হবে।

প্রতিযোগিতার মাঠে এগিয়ে

‘হার্মিয়াস’-এর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছে ‘ভেনাস অ্যারোস্পেস’ নামে আরেকটি স্টার্টআপ, যারা ২০২৫ সালের মধ্যে পরীক্ষামূলক হাইপারসোনিক বিমানের উড্ডয়ন করতে চায়। তবে সময়মতো পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় ‘হার্মিয়াস’ এই দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে।

প্রতিরক্ষা খাতেও নজর

শুধু যাত্রী পরিবহণ নয়, প্রতিরক্ষা খাতেও এই হাইপারসোনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে ‘লকহিড মার্টিন’ একটি হাইপারসোনিক যুদ্ধবিমান ‘এসআর-৭২ ডার্কস্টার’ তৈরির কাজ চালাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এটি বিশ্বের দ্রুততম লড়াকু বিমান হতে পারে। তবে নির্মাণে নানা চ্যালেঞ্জ থাকায় কাজটি সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠেছে।

চিনের প্রতিযোগিতা

এদিকে, চিন ইতিমধ্যেই গোবি মরুভূমিতে তাদের নিজস্ব হাইপারসোনিক বিমানের পরীক্ষা চালিয়েছে, যা মাত্র দুই ঘণ্টায় নিউ ইয়র্ক পৌঁছানোর সক্ষমতা রাখে বলে দাবি করা হচ্ছে। সামরিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে চিনের এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে।

ভবিষ্যতের দিগন্ত

‘হার্মিয়াস’-এর সফল পরীক্ষা মার্কিন প্রশাসনের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। শুধু যাত্রী পরিবহণ নয়, সামরিক খাতেও এই প্রযুক্তির প্রয়োগ হতে পারে। বিশ্ব আকাশযাত্রার গতিশীলতা বদলে দিতে প্রস্তুত এই শব্দভেদী বিমান। এখন শুধু দেখার পালা, কখন এই হাইপারসোনিক বিমান আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে ওঠে।

মোদীর আমন্ত্রণে সাড়া, ভারতে আসছেন পুতিন! দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

Read more

Local News