গঙ্গাসাগরে শুধু স্নান নয়!
গঙ্গাসাগর, যার নাম শুনলেই মনে পড়ে সাগরস্নান ও পুণ্যলাভের কথা, কিন্তু এই স্থান শুধু পুণ্যার্থীদের জন্য নয়, ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্যও অত্যন্ত আকর্ষণীয়। সাধারণত গঙ্গাসাগর মানে মকর সংক্রান্তির সময়ে সাগরে স্নান, পুণ্যার্থীদের ভিড়, ঠান্ডা আবহাওয়া আর ভক্তদের এক অন্যরকম দৃশ্য। তবে যদি স্নানের জন্য উপযুক্ত তিথি না মেনে শুধু ঘুরতে যেতে চান, তবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর দ্বীপটি নিঃসন্দেহে একটি আদর্শ গন্তব্য।
গঙ্গার জল যেখানে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিলিত হয়েছে, সেখানে সাগরদ্বীপের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আপনাকে এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে আপনি উপভোগ করতে পারেন দিগন্তবিস্তৃত জলরাশি, বিশাল সাগর আর নিরালা পরিবেশ। এছাড়া, কপিল মুনির আশ্রমও এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যা ধর্মীয় ভাবনার পাশাপাশি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপস্থাপন করে।
গঙ্গাসাগরে যাত্রা এবং ভ্রমণ পরিকল্পনা
এখন গঙ্গাসাগরে পৌঁছানো অত্যন্ত সহজ। কলকাতা থেকে ক্রুজ বা ভেসেলযাত্রা করে আপনি সোজা পৌঁছে যেতে পারেন কচুবেড়িয়া জেটিঘাটে, যেখানে থেকে মাত্র কিছুটা দূরত্বে রয়েছে গঙ্গাসাগর। আউট্রাম ঘাট থেকে ছাড়ে বড়সড় ক্রুজ়, যা আপনাকে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টায় পৌঁছে দেয়। এছাড়া, কাকদ্বীপ বা নামখানা থেকেও সহজে আসা যায়।
গঙ্গাসাগর ভ্রমণের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে জলপথের যাত্রা। সাগরের ওপর ভেসেল বা ক্রুজ়ে যাত্রা করলে আপনি প্রকৃতির এক অনন্য রূপ দেখতে পাবেন, যা গঙ্গাসাগর ভ্রমণকে আরও স্মরণীয় করে তুলবে।
কী কী দেখবেন গঙ্গাসাগরে?
গঙ্গাসাগরে আসলে মূল আকর্ষণ হচ্ছে কপিল মুনির আশ্রম। এখানে ছোট তিন চূড়া বিশিষ্ট মন্দিরের ভিতরে রয়েছে কপিল মুনি, সগর রাজা এবং দেবী গঙ্গার মূর্তি। মন্দিরে পুজো দেওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে। আশ্রমের পাশেই মা গঙ্গা পার্ক, যেখানে সন্ধ্যাবেলা আলোকজ্জ্বল পরিবেশে বসে সময় কাটাতে পারবেন। এছাড়া, আপনি ঘুরে আসতে পারেন গঙ্গাসাগরের মোহনা, লাইট হাউস, মনসা মন্দির, এবং রামকৃষ্ণ মিশন।
মোহনায় একটি খাঁড়ি সাগরে এসে মিশেছে, যা অত্যন্ত সুন্দর একটি দৃশ্য। এখানকার পরিবেশ শান্ত, যা আপনাকে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে সাহায্য করবে। এছাড়া, রামকৃষ্ণ মিশনে সন্ধ্যাবেলা আরতির দৃশ্য দেখতে যেতে পারেন, যা এক শান্তিপূর্ণ অভিজ্ঞতা দেবে।
টোটো ভাড়া করে আপনি প্রায় ৩০০-৪০০ টাকায় এই সব জায়গা ঘুরে আসতে পারেন, আর একটানা দু’ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত দর্শনীয় স্থান দেখে নিতে পারবেন।
থাকার ব্যবস্থা ও অন্যান্য তথ্য
গঙ্গাসাগরে থাকার জন্য একাধিক অপশন রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ যুব আবাস, অতিথি আবাস, হোটেল, এবং ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের থাকার জায়গাগুলি থেকে আপনি বেছে নিতে পারেন। গত কয়েক বছরে এখানে নতুন থাকার ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, যা পর্যটকদের সুবিধার্থে। ৮০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত দামের মধ্যে আপনি সুবিধাজনক আবাস খুঁজে পাবেন।
যতটুকু সময় লাগবে এবং কীভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখা থেকে ট্রেন ধরলে কাকদ্বীপ স্টেশনে পৌঁছানো যাবে। সেখান থেকে টোটো বা অটো নিয়ে ফেরিঘাটে যেতে হবে। ফেরিঘাটে একাধিক ফেরি আছে, যেগুলি কচুবেড়িয়া জেটিঘাটে নিয়ে যাবে। কচুবেড়িয়া ঘাট থেকে গঙ্গাসাগর প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে। গঙ্গাসাগর অ্যাপ থেকে ভেসেলের সময়সূচি জেনে নিলে যাত্রা আরও সহজ হবে।
উপসংহার
গঙ্গাসাগর শুধু স্নানের জন্যই নয়, পুরো পরিবারের সঙ্গে শান্তির মাঝে বেড়ানোর জন্যও একটি আদর্শ স্থান। পুণ্যস্নানের ছুটিতে বা কোনো বিশেষ তিথিতে না গেলেও আপনি গঙ্গাসাগরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ধর্মীয় স্থান, এবং মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে পারেন। সুতরাং, আগামী ছুটিতে একটু শান্তি খুঁজে নেবার জন্য গঙ্গাসাগর একটি দারুণ গন্তব্য।
সত্যিকারের সাধ্বী নাকি শুধুই লোকদেখানো! নেটপ্রভাবী হর্ষা রিচারিয়া নিয়ে কেন এত বিতর্ক?