শেয়ার ছাড়তে পারে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলি মূলধনের জোগানে!
দেশের বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলি এক কঠিন আর্থিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। খরচ বাড়লেও গ্রাহকদের কাছ থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে আদায় করা হচ্ছে না, যার ফলে সংকট আরও গভীর হচ্ছে। এই অবস্থায় মূলধনের অভাব মেটাতে শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করছে বেশ কিছু বিদ্যুৎ সংস্থা। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বিশেষ মন্ত্রিগোষ্ঠী সুপারিশ করতে চলেছে যে, বণ্টন সংস্থাগুলিকে বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করতে হবে। আগামী এপ্রিল মাসে এই বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে একটি রিপোর্ট পেশ করা হবে।
আর্থিক সংকটের কারণ কী?
বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে ও পরিকাঠামো উন্নত করতে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ যতটা বেড়েছে, সেই তুলনায় গ্রাহকদের থেকে আদায়কৃত মাসুলের হার সেইভাবে বাড়ানো হয়নি। ফলে এই সংস্থাগুলির ঋণের বোঝা ক্রমশ বাড়ছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বছর কয়েক আগেও বণ্টন সংস্থাগুলির বকেয়া পাওনা ছিল প্রায় ৫৬,০০০ কোটি টাকা। তবে সংস্থাগুলির বকেয়া আদায়ের কার্যক্রমে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে এবং বর্তমানে সেই বকেয়া কমে দাঁড়িয়েছে ৩,০০০ কোটি টাকায়।
কেন্দ্রীয় সরকার ২০২১ সাল থেকে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলিকে নগদ সহায়তা হিসেবে ৩ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সাহায্য দিয়েছে। তবুও নগদ সংকট কাটছে না, ফলে নতুন করে মূলধন সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
শেয়ার বাজারে প্রবেশের পরিকল্পনা
বিদ্যুৎ মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা মনে করছেন, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলি যদি শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত হয়, তাহলে তাদের জন্য এক নতুন আর্থিক দিগন্ত খুলে যাবে। এই উদ্যোগ সফল হলে—
- বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সরাসরি মূলধন সংগ্রহ সম্ভব হবে।
- সংস্থাগুলির নগদ প্রবাহ বজায় থাকবে এবং ঋণের বোঝা কমবে।
- নতুন প্রযুক্তি এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করা সহজ হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করা যায়, তাহলে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে এবং সুবিধা পাবে সাধারণ গ্রাহকেরাও।
বিদ্যুৎ চাহিদার রেকর্ড বৃদ্ধি, কী বলছে সরকার?
এবারের গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা ২৬০ গিগাওয়াট পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, যা গত বছরের ২৪০ গিগাওয়াটের তুলনায় অনেকটাই বেশি। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থাগুলির কাছে বর্তমানে ৫ কোটি টনের বেশি কয়লা মজুত রয়েছে, যা কমপক্ষে ২১ দিনের বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম।
তিনি আরও আশ্বস্ত করেছেন যে, কুম্ভমেলা মিটলেই রেলে কয়লা পরিবহণ আরও বাড়ানো হবে, যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো বিঘ্ন না ঘটে। ফলে সরবরাহ নিয়ে আপাতত তেমন কোনো চিন্তা নেই বলেই মনে করছে কেন্দ্রীয় সরকার।
শেষ কথা
বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। তবে বণ্টন সংস্থাগুলির আর্থিক সংকট কাটাতে শেয়ার বাজারে প্রবেশ করাটা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। একদিকে যেমন বেসরকারি বিনিয়োগ আনার মাধ্যমে মূলধন সংকট দূর করা সম্ভব, অন্যদিকে এটি গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ইঙ্গিতও বহন করছে। এখন দেখার বিষয়, সরকারের এই পরিকল্পনা ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ পরিষেবার মানোন্নয়নে কতটা কার্যকরী হয়।
গবেষণার আড়ালে সামরিক পরিকল্পনা? সমুদ্রের গভীরে চিনের রহস্যময় কেন্দ্র ঘিরে উদ্বেগ

