ক্যানসারের যম করোনা?
করোনা ভাইরাস কি ক্যানসার সারাতে সক্ষম? এই প্রশ্নটা হয়তো অনেকের মনেই আসে। বিশেষত যখন বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, মারণরোগ কাটানোর জন্য মারণ ভাইরাসই কাজে লাগানো হতে পারে। সম্প্রতি, নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দাবি করেছেন যে, কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে কার্যকর হতে পারে। এই গবেষণার ফলাফল প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, কিন্তু যদি সত্যি হয়, তবে এটি চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
গবেষণাটি কী বলছে?
নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা তাঁদের পরীক্ষায় দেখতে পান, করোনা ভাইরাসের RNA ক্যানসার কোষ নষ্ট করতে সক্ষম। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষগুলি অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং ক্যানসার কোষগুলিকে আক্রমণ করতে শুরু করে। সাধারণত, আমাদের শরীরের ইমিউন কোষগুলো ক্যানসার কোষগুলির বিরুদ্ধে সক্রিয় হতে পারে না, কারণ তাদের জন্য বিশেষ একটি ‘রিসেপ্টর’ প্রয়োজন, যা শরীরে সাধারণভাবে তৈরি হয় না। কিন্তু করোনা ভাইরাস শরীরে ঢুকলে, মোনোসাইট কোষটি বদলে গিয়ে ‘ননক্লাসিকাল মনোসাইট’ নামে একটি নতুন কোষ তৈরি করে, যেটি ‘সিসিআর২’ নামক রিসেপ্টর তৈরি করে। এই রিসেপ্টর ক্যানসার কোষের দিকে যেতে সক্ষম এবং একবার সেখানে পৌঁছে গেলে, সেগুলিকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
কিভাবে সম্ভব?
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে যে মোনোসাইট কোষের রূপান্তর ঘটে, তা ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। এর মানে এই যে, করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এমনভাবে উদ্দীপিত করতে পারে, যাতে তা ক্যানসার কোষের দিকে পৌঁছে এবং সেগুলি ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। এই রকম গবেষণা নতুন হলেও, এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের কাছে আশার আলো হয়ে উঠেছে।
কিন্তু, কতটা কার্যকর?
এখনও এই ধারণাটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। ক্যানসারের চিকিৎসকরা এই গবেষণার ফলাফল নিয়ে কিছুটা সতর্ক। ক্যানসার চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “কোভিডের জন্য আমরা অনেক ক্ষতি দেখেছি। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, করোনা ভাইরাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তবে এটি কতটা কার্যকর হবে, তা জানার জন্য আরও অনেক গবেষণা প্রয়োজন।” তাঁর মতে, দীর্ঘমেয়াদী গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ ছাড়া এই দাবি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
ক্যানসার চিকিৎসক শুভদীপ চক্রবর্তীও একই মতামত প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, “করোনা ভাইরাস দিয়ে ক্যানসার সারানোর পদ্ধতি কতটা সফল হবে, তা জানার জন্য কমপক্ষে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে।” এটি সত্যিই আশার বিষয় হলেও, অন্যান্য গবেষণার মতোই এরও বিস্তারিত পরীক্ষা প্রয়োজন।
একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, মানুষের শরীর বিভিন্ন হয়ে থাকে। করোনার প্রভাব একেক মানুষের শরীরে আলাদা হতে পারে। যেহেতু গবেষণা এখনও পশুদের উপর ভিত্তি করে হয়েছে, তাই মানুষের শরীরে এটি কেমন প্রভাব ফেলবে, তা জানা যায়নি।
সামগ্রিকভাবে, বিজ্ঞানীরা এখন করোনা ভাইরাসকে ইমিউনোথেরাপির একটা সম্ভাবনা হিসেবে দেখে গবেষণা করছেন। কিন্তু এটির প্রয়োগের আগে আরও অনেক পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। যদি গবেষণায় সফলতা আসে, তাহলে ক্যানসার চিকিৎসায় এটি একটি নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।
এতদিনে, যদি এই গবেষণা সত্যি হয়, তবে আমাদের চিকিৎসা পদ্ধতিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে, তবে এখনই কোনও কিছু বলা সম্ভব নয়।