কোয়ান্টামের নতুন যুগ!
কোয়ান্টাম দুনিয়া সেই জায়গা, যেখানে সাধারণ নিয়মের ছাড়পত্র নেই, যুক্তি মাথা চুলকে বসে থাকে, আর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণারা নিজেরাই নতুন নিয়ম বানিয়ে ফেলে। হাইজ়েনবার্গ যখন ১৯২৫ সালে নিজের গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন, তখনই শুরু হয়েছিল কোয়ান্টাম বিপ্লবের হিসেব। এক শতাব্দী পরে, ভারত ২০২৩ সালে শুরু করেছে ন্যাশনাল কোয়ান্টাম মিশন, যার লক্ষ্য—দেশে কোয়ান্টাম গবেষণা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে এক নতুন স্তরে পৌঁছে দেওয়া।
এই প্রকল্পের অধীনে দেশের ১০০টি কলেজ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম শিক্ষা ও গবেষণার জন্য সরকারি অনুদান পাবে। ভবিষ্যতে স্নাতক স্তরেও কোয়ান্টাম সায়েন্স যুক্ত হবে—মানে কলেজের বেঞ্চে বসেই ছাত্ররা কোয়ান্টাম প্রযুক্তির প্রথম পাঠ পড়ে ফেলতে পারবেন।
কোথায় ও কীভাবে কোয়ান্টাম পড়া যায়?
কোয়ান্টাম বিজ্ঞানের দরজা খুলতে চাইলে প্রথম শর্ত—পদার্থবিদ্যা নিয়ে আগ্রহ। তবে এটাই একমাত্র রাস্তা নয়।
যাঁরা কোয়ান্টাম পড়তে পারবেন
- পদার্থবিদ্যায় স্নাতক
- গণিত বা ফলিত গণিত
- ইলেকট্রনিক্স
- কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্রছাত্রীরা
কোথায় পড়ানো হয়
ভারতের বেশ কয়েকটি গবেষণা ও শিক্ষাকেন্দ্রেই কোয়ান্টাম প্রযুক্তির উচ্চশিক্ষা পাওয়া যায়:
- IITs
- IISc বেঙ্গালুরু
- IISER (বিভিন্ন কেন্দ্র)
- বিশেষ কিছু গবেষণা ল্যাব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগ
এখানে কোয়ান্টাম ফিজ়িক্স, কোয়ান্টাম ইনফরমেশন, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, কোয়ান্টাম অপটিক্স ও কোয়ান্টাম মেটিরিয়ালস নিয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়া যায়।
এখনও স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ে সুযোগ বেশি, তবে শিগগিরই কলেজ স্তরেও আলাদা কোর্স চালু হবে।
কোথায় কাজ মিলবে কোয়ান্টাম বিশেষজ্ঞদের?
কোয়ান্টাম প্রযুক্তি শুধু গবেষণার ঘরে আটকে নেই; এর প্রভাব প্রযুক্তি ও শিল্পের নানা স্তরে ঢুকে পড়েছে।
কোয়া্ন্টামের ব্যবহার বাড়ছে যেসব ক্ষেত্রে
- সুপার কম্পিউটারের থেকেও শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটার
- জলবায়ু পূর্বাভাসের জটিল অ্যালগোরিদম
- নির্ভুল সময় মাপার যন্ত্র
- সাইবার সিকিউরিটির পরবর্তী যুগ, যেখানে তথ্য চুরি প্রায় অসম্ভব
- স্বাস্থ্য প্রযুক্তি—ওষুধ তৈরি ও রোগ নির্ণয়ের উন্নত মডেল
- প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ গবেষণা
- ব্যাঙ্কিং ও ফিনটেক
এই সব ক্ষেত্রেই কোয়ান্টাম বিজ্ঞানীরা প্রয়োজন। শিল্পক্ষেত্রেও এখন কোয়ান্টাম বিশেষজ্ঞদের জন্য চাকরির চাহিদা বাড়ছে।
কোয়ান্টাম পড়তে হলে কী কী জানতে হবে?
কোয়ান্টাম তত্ত্বে দক্ষ হতে হলে কয়েকটি বিষয়ে হাত পাকাতে হবে:
- Python, Qiskit বা অন্যান্য কোয়ান্টাম প্রোগ্রামিং টুল
- উচ্চতর গণিত
- লিনিয়ার অ্যালজেব্রা
- অ্যালগোরিদম ও ডেটা স্ট্রাকচার
এগুলি কোয়ান্টামকে শুধু তত্ত্ব নয়, বাস্তবে কাজে লাগানোর ক্ষমতা তৈরি করে।
শেষ কথা
এই মুহূর্তে কোয়ান্টাম প্রযুক্তি দ্রুত এগোচ্ছে, এবং বিশ্বব্যাপী গবেষণার গতি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। যাঁরা পদার্থবিদ্যা বা টেকনোলজির নতুন দিগন্তে কাজ করতে চান, তাঁদের এখনই কোয়ান্টামের দুনিয়ায় নামার সেরা সময়। ভবিষ্যতের কম্পিউটার, সাইবার নিরাপত্তা, জলবায়ু বিজ্ঞান বা ওষুধ প্রস্তুতিতে যে বিপ্লব আসতে চলেছে—সেটার কেন্দ্রে থাকবে কোয়ান্টাম। এখনই প্রস্তুতি শুরু করলে আগামী দশকেই এই ক্ষেত্রের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠা সম্ভব।

