কৈশোরের জটিল মানচিত্রে ‘অ্যাডোলেসেন্স’!
নেটফ্লিক্সে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া একটি ওয়েব সিরিজ নিয়ে চর্চা এখন তুঙ্গে। নাম ‘অ্যাডোলেসেন্স’। মার্চের ১৩ তারিখে মুক্তি পেয়েই মাত্র ক’দিনে ৬.৫ কোটিরও বেশি মানুষ দেখে ফেলেছে সিরিজটি। ইংল্যান্ডের স্কুলে এটি শিক্ষামূলক কনটেন্ট হিসেবে দেখানোর পরিকল্পনায় উঠেছে বিতর্কের ঝড়। আর সেই ঝড় পৌঁছে গেছে আমাদের কলকাতার অভিভাবকদের ঘরেও।
সিরিজটি মূলত এক কিশোর ও তার পরিবারকে ঘিরে। গল্পের কেন্দ্রে রয়েছে স্কুলের এক সহপাঠীকে খুনের অভিযোগে কারাগারে যাওয়া এক কিশোর। সেখানে উঠে এসেছে সাইবারবুলিং, অনলাইন হেনস্থা, নারীবিদ্বেষী মনোভাব এবং কিশোর-মননে অ্যান্ড্রু টেটের মতো ব্যক্তিত্বের প্রভাব—যা আজকের দিনে ইন্টারনেট-ভিত্তিক সমাজে কিশোর-কিশোরীদের জন্য একটি বড় বাস্তবতা।
এক কথায়, এই সিরিজ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়, কেমন করে ডিজিটাল যুগে কৈশোর তার পথ হারাচ্ছে—ভয়, কৌতূহল, এবং প্রতিবাদের দোলাচলে কাঁপতে থাকা একটি প্রজন্মের মুখচ্ছবি।
ইংল্যান্ডে ইতিমধ্যে স্কুলে স্কুলে এই সিরিজটি দেখানোর প্রস্তাবে সায় দিয়েছে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাঁদের মতে, বাস্তব অভিজ্ঞতা ও কনটেন্ট থেকে শেখানোই ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। কিন্তু সেই সঙ্গে রয়েছে তীব্র বিরোধিতাও। কেউ বলছেন, এই ধরনের দৃশ্যাবলি কিশোর মনে আরও বিভ্রান্তি আনতে পারে, বাড়াতে পারে মানসিক চাপ।
এতদিনে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের বিভিন্ন শহরেও, বিশেষ করে কলকাতায়। অভিভাবকরা দোটানায় পড়েছেন—এমন কনটেন্ট কি কিশোরদের দেখা উচিত? নাকি এগুলো থেকে তাদের দূরে রাখাই ভালো?
কলকাতার এক পরিবারের অভিজ্ঞতা থেকে স্পষ্ট, এই বিতর্ক আসলে আমাদের নিজেদের মধ্যেও চলছে। সায়নী, যিনি এক কিশোরীর মা, বলেন, “ভাগ্যিস আমার মেয়ে ইনস্টাগ্রামে তেমন সময় কাটায় না!” পাশে বসে থাকা তার তেরো বছরের মেয়ে অদ্রিজা হেসে বলে ওঠে, “জানলে কী করে? পুরো সিরিজটা যদি দেখতে দাও, বুঝতাম আমি এসব জানি কি না!”
এই কথার পর বাবা প্রলয়ের মুখ ভার হয়ে ওঠে। কিছুক্ষণ সিরিজটি একসঙ্গে দেখার পর সে নিজেই বন্ধ করে দেয় টিভি। অদ্রিজা কিছু বলে না, শুধু নিচু গলায় ফিসফিস করে, “পরে দেখে নেব…”
এই সংলাপগুলো যেন আমাদের সকলের ঘরের কথাই বলে দেয়। সন্তানদের নিরাপদ রাখতে গিয়ে আমরা কখন যে তাদের থেকে দূরে সরে যাই, তা বোঝা যায় না। অথচ, এই ধরনের কনটেন্ট আমাদের সেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করায়।
রাষ্ট্রের গণ্ডি পেরিয়ে এই সিরিজ এখন বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। কারণ এটা শুধুমাত্র একটি ওয়েব সিরিজ নয়, বরং কৈশোরের মানসিক সংকট ও অভিভাবকদের চ্যালেঞ্জের এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি।
‘অ্যাডোলেসেন্স’ হয়তো কোনও সমাধান দিচ্ছে না, কিন্তু এমন সব প্রশ্ন তুলে ধরছে, যেগুলি এড়িয়ে যাওয়া আর সম্ভব নয়। আর সেই কারণেই, এই বিতর্ক আমাদের সময়ের প্রয়োজন—ভয়ের নয়, বোঝাপড়ার জায়গা।
ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’ ঘোষণার অপেক্ষায় বিশ্ব, ভারতের চিন্তা বাড়ছে!