কে এই জগন্নাথ গুপ্ত?
২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি ভিন্ন রাজনৈতিক পরিবেশে নিজেকে উপস্থাপন করে জোরালো চর্চায় উঠে এসেছেন এক ব্যক্তি—জগন্নাথ গুপ্ত। একদিকে প্রাক্তন সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠের সংবর্ধনা, অন্যদিকে তৃণমূলের হেভিওয়েট অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে নিজের হাসপাতালের উদ্বোধন! প্রশ্ন উঠছেই—কে এই ‘গুপ্ত’ জগন্নাথ?
🧑💼 একজন ‘ব্যবসায়ী’, যিনি এখন ‘প্রতিষ্ঠান’
৭২ বছরের জগন্নাথ গুপ্ত জন্মসূত্রে উত্তর ভারতীয় হলেও পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজের বাসিন্দা। ভাষায় হিন্দির টান থাকলেও বাংলা বলা-শোনা তাঁর দখলে। প্রথম জীবনে যুক্ত ছিলেন তেলের ব্যবসায়—স্থানীয়রা যাকে বলেন ‘কাটা তেল’, তিনি বলেন ‘অয়েল রিফাইনিং’। সেখান থেকেই অর্থ সঞ্চয় করে প্রবেশ করেন শিক্ষাক্ষেত্রে।
২০০৮ সালে গড়ে তোলেন বজবজ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ অফ টেকনোলজি, পরে ২০১৮-তে স্থাপন করেন জগন্নাথ গুপ্ত মেডিক্যাল কলেজ। এবার কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ধারে তৈরি করছেন ১২০০ শয্যার মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল—জগন্নাথ গুপ্ত মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল, যার প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধনে হাজির থাকছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে।
🕴️ একদিনে দুই জগন্নাথ!
শুক্রবার হলদিয়ায় লক্ষ্মণ শেঠের সংস্থা তাঁকে সংবর্ধনা দেয়, আর শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুরে তাঁর নতুন হাসপাতালের উদ্বোধন করবেন অভিষেক। ফলে জগন্নাথকে ঘিরে কৌতূহল ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে—শুধু তৃণমূল নয়, পদ্মবনেও।
একদিকে বাম-কংগ্রেস ঘরানার এক শিক্ষানুরাগী সংগঠকের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেওয়া, অন্যদিকে শাসকদলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতাকে ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে টেনে আনা—এই দ্বৈত ছবি প্রশ্ন তুলেছে জগন্নাথের রাজনৈতিক অবস্থান ও প্রভাব নিয়ে।
🏥 হাসপাতাল, পরিবার আর ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষা’
এই প্রকাণ্ড হাসপাতালটি একবার পুরোপুরি তৈরি হলে সেটি হবে পূর্ব ভারতের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান। এই প্রকল্পে জগন্নাথের পরিবারও জড়িত—এক মেয়ে ব্রিটেনে, আরেকজন আমেরিকায়, বড় মেয়ে কলকাতায় ‘আরতি নার্সিংহোম’ চালান। বড় জামাই তদারকি করেন নার্সিংহোম, বড় ছেলে সামলান ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। আর কনিষ্ঠ পুত্র, যিনি চিকিৎসক, তিনি যুক্ত এই নতুন হাসপাতালের সঙ্গে।
🧐 কেন অভিষেক? মমতা নন?
এত বড় প্রকল্পের উদ্বোধনে কেন মুখ্যমন্ত্রী নয়, অভিষেক? উত্তরে জগন্নাথের সহজ সরল জবাব, “যাঁকে পাই, তাকেই তো ডাকি! আমি ডাকলেই সবাই আসবেন এমন তো নয়!” একপ্রকার রাজনৈতিক জটিলতা এড়িয়ে গেছেন কৌশলে।
📢 শেষ কথা
রাজনৈতিক মঞ্চে তিনি হয়তো একা নন, কিন্তু তাঁর আশেপাশে থাকা দুই ভিন্ন মতাদর্শের প্রতিনিধিই বলে দিচ্ছে—জগন্নাথ গুপ্ত এখন আর শুধু ব্যবসায়ী নন, তিনি এক সম্ভাব্য ‘পাওয়ার ব্রোকার’, এক সম্ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু। এবার দেখার, রাজনীতির কোন দিক তাঁর পাশে দাঁড়ায়, আর কোন দিক প্রশ্ন তোলে—কে এই জগন্নাথ গুপ্ত?
চুম্বন নয়, কবিতার ছোঁয়ায় প্রেম ফুটল শ্রাবন্তীর খোলা পিঠে!

