Thursday, January 30, 2025

কেন সইফের উপর হামলা, আদৌ নিরাপদ মুম্বই? বিশ্নোই যোগ নিয়ে প্রশ্ন ও বিতর্ক

Share

কেন সইফের উপর হামলা!

বলিউডে চাঞ্চল্য ছড়াল বৃহস্পতিবার সকালে। মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করানো হলো সইফ আলি খানকে। তবে কোনো সাধারণ অসুস্থতার জন্য নয়, বরং রক্তাক্ত অবস্থায়। ছ’টি ছুরির আঘাত, যার মধ্যে দুটি গুরুতর। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অটোরিকশায়। কিন্তু কীভাবে ঘটল এমন মর্মান্তিক ঘটনা? কেনই বা এরকম আক্রমণের শিকার হলেন বলিউডের ‘ছোটে নবাব’?

ঘটনার শুরু: মধ্যরাতে দুষ্কৃতীর হানা

সইফ ও করিনা কপূর খান তাঁদের দুই সন্তান তৈমুর ও জেহ্‌-কে নিয়ে থাকেন মুম্বইয়ের বান্দ্রার অভিজাত আবাসন ‘সৎগুরু শরণ’-এর দ্বাদশ তলায়। বুধবার রাতে করিনা গিয়েছিলেন দিদি করিশ্মা ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করতে। সেই সময় তৈমুর ও জেহ্‌ ঘুমাচ্ছিলেন। রাত আড়াইটা নাগাদ হঠাৎই তাঁদের ঘর থেকে ভেসে আসে চিৎকার।

একজন গৃহসহায়িকা প্রথম দেখতে পান, ঘরে ঢুকে পড়েছে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। তার চিৎকারে ঘুম ভাঙে সইফের। পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে ওই দুষ্কৃতীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় সইফের। এরপর ধারালো ছুরি দিয়ে সইফকে বেশ কয়েকবার আঘাত করে সে। বাহু, ঘাড় ও মেরুদণ্ডে গুরুতর আঘাত পান অভিনেতা। জানা গেছে, ঘটনাস্থলে করিনাও উপস্থিত ছিলেন।

সইফের

১ কোটি টাকা দাবি এবং পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত

গৃহসহায়িকার বর্ণনা অনুযায়ী, সন্দেহভাজন ব্যক্তি ঘরে ঢুকে সরাসরি দাবি করে এক কোটি টাকা। কিন্তু তা দিতে অস্বীকার করলে সে চিৎকার শুরু করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ওই দুষ্কৃতী ঘটনার পর জরুরি সিঁড়ি দিয়ে পালিয়ে যায়। ফুটেজ দেখে মুম্বই পুলিশ তাকে শনাক্ত করেছে এবং অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে।

অটোরিকশায় হাসপাতালে ভর্তি

ঘটনার পরই পটৌদী পরিবারের এক কর্মী দ্রুত সইফকে লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু অবাক করার বিষয়, তাঁকে পারিবারিক গাড়িতে নয়, বরং অটোরিকশায় করে নিয়ে যাওয়া হয়। এটি নিয়ে বলিউড মহলে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেন এমন ঘটল, সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সইফের অবস্থা গুরুতর ছিল এবং তাঁকে দ্রুত অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুত করা হয়।

আড়াই ঘণ্টার অস্ত্রোপচার

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সইফের শিরদাঁড়ায় ভাঙা ছুরির একটি ফলা গেঁথে ছিল, যার কারণে মেরুদণ্ড থেকে সেরিব্রোস্পাইনাল তরল বের হচ্ছিল। আড়াই ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেই ছুরি বের করা হয়। ঘাড় ও বাহুর আঘাতের জন্য প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়েছে। চিকিৎসক নিতিন দাঙ্গে জানিয়েছেন, এই আঘাত থেকে সইফের পঙ্গুত্ব বা মৃত্যুও হতে পারত। তবে এখন তিনি বিপন্মুক্ত।

বলিউড ও মুম্বইয়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

এই ঘটনা বলিউড তারকাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। শাহরুখ খান, সারা আলি খান, রণবীর কাপুরসহ অনেক তারকা সইফকে দেখতে হাসপাতালে আসেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে বান্দ্রার মতো অভিজাত এলাকায় তারকাদের নিরাপত্তা নিয়ে। অভিনেত্রী রবীনা টন্ডন বলেন, “এখন তারকাদের আক্রমণ করা খুব সহজ হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনকে নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।”

বিশ্নোই যোগের সন্দেহ

অনেকে সন্দেহ করছেন, এই হামলার সঙ্গে লরেন্স বিশ্নোই গ্যাংয়ের কোনো যোগ আছে কি না। ২৬ বছর আগে সলমন খান, সইফ ও তাব্বুর বিরুদ্ধে কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের অভিযোগ ওঠে। সলমন এখনও এই গ্যাংয়ের হুমকির মুখে রয়েছেন। ফলে প্রশ্ন উঠছে, সইফ কি সেই শিকারের ঘটনার জেরেই হামলার শিকার? পুলিশ এখনও এ বিষয়ে নিশ্চিত নয়।

রাজনৈতিক বিতর্ক ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

মুম্বইয়ের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দল শিবসেনা। তাঁদের বক্তব্য, যদি সইফ আলি খান নিরাপদ না হন, তবে সাধারণ মানুষ কিভাবে নিরাপদ থাকবে? তবে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস এই দাবিকে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “মুম্বই দেশের সবচেয়ে সুরক্ষিত শহর। প্রশাসন প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছে।”

সপরিবার আতঙ্ক ও সমর্থন

ঘটনার পর ববিতা নাতি তৈমুর ও জেহ্‌-কে করিশ্মার কাছে নিয়ে গেছেন। করিনা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা হাসপাতালের বাইরে রয়েছেন। সন্ধ্যায় সইফের মা শর্মিলা ঠাকুর ছেলেকে দেখতে আসেন। পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাপূর্ণ হলেও পরিবারের সবাই সইফের দ্রুত আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করছেন।

শেষ কথা

এই হামলা শুধু সইফের উপর আঘাত নয়, মুম্বইয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপরও প্রশ্নচিহ্ন। তারকাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। সইফ বর্তমানে বিপন্মুক্ত হলেও, বলিউডে নিরাপত্তা নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা থেকে মুক্তি মিলতে সময় লাগবে।

সইফ আলি খান: ৬টা কোপ, শিরদাঁড়ার পাশেই গভীর ক্ষত সইফের, অবস্থা কি আশঙ্কাজনক?

Read more

Local News