কৃষ্ণ সাগরে শান্তির বার্তা!
রাশিয়া এবং ইউক্রেন অবশেষে কৃষ্ণ সাগরে পণ্যবাহী জাহাজের ওপর সামরিক হামলা না চালানোর বিষয়ে একমত হয়েছে। সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত তৃতীয় পর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, দুই দেশই কৃষ্ণ সাগরে নিরাপদ নৌচলাচল নিশ্চিত করতে এবং বাণিজ্যিক জাহাজকে সামরিক অভিযানের জন্য ব্যবহার না করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
কূটনৈতিক সমাধানের পথে বড় পদক্ষেপ
গত কয়েক মাস ধরেই কৃষ্ণ সাগর নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে ছিল। রুশ যুদ্ধজাহাজ এবং ইউক্রেনের ড্রোন হামলার পাল্টা-পাল্টি ঘটনায় বাণিজ্যিক নৌপথগুলো ঝুঁকির মুখে পড়ে। তবে রিয়াধের সাম্প্রতিক বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে এই উত্তেজনার নিরসন সম্ভব হয়েছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই চুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এবং শিগগিরই যুদ্ধবন্দিদের প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়াও শুরু হবে। যুক্তরাষ্ট্রও সাধারণ নাগরিকদের মুক্তি এবং নির্বাসিত ইউক্রেনীয় শিশুদের ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।
ইউক্রেনের প্রতিক্রিয়া
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ বৈঠকের পর বলেন, “যদি রুশ যুদ্ধজাহাজ কৃষ্ণ সাগরের পূর্ব অংশ থেকে সরে যায়, তাহলে ইউক্রেনের আত্মরক্ষার পূর্ণ অধিকার বজায় থাকবে।” তবে বর্তমান চুক্তির পর তিনি আশাবাদী যে কৃষ্ণ সাগরে আর কোনো সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি হবে না।
রাশিয়ার অবস্থান
রাশিয়াও জানিয়েছে, তারা এই চুক্তি মেনে চলবে এবং কৃষ্ণ সাগরে সামরিক অভিযানের জন্য কোনো বাণিজ্যিক জাহাজ ব্যবহার করবে না। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, “আমরা আশা করি এই চুক্তি দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথ প্রশস্ত করবে।”
সৌদির মধ্যস্থতা এবং আমেরিকার ভূমিকা
গত দু’মাসে এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো সৌদি আরবে বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পশ্চিম বিষয়ক দূত এবং রুশ-ইউক্রেন সংঘাত সমাধানের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন। এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ এই ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
কৃষ্ণ সাগরের ভূরাজনীতি
কৃষ্ণ সাগর শুধুমাত্র দুই দেশের মধ্যে নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চল দিয়ে বিশ্ববাজারে শস্য এবং অন্যান্য পণ্য পরিবহন করা হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্য পরিবহন ব্যাহত হয়েছিল, যা বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের আশঙ্কা তৈরি করেছিল।
চুক্তির ভবিষ্যৎ
এখন সবার দৃষ্টি থাকবে এই চুক্তির বাস্তবায়নের দিকে। সামরিক উত্তেজনা কমিয়ে কৃষ্ণ সাগরে নিরাপদ নৌচলাচল নিশ্চিত করতে রাশিয়া ও ইউক্রেন কতটা সফল হয়, সেটাই দেখার বিষয়। তবে এই চুক্তি নিঃসন্দেহে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।