Monday, December 1, 2025

কৃষ্ণনগর কাণ্ড: প্রেমের টানাপোড়েন ও কেরোসিনের ঘটনা

Share

কৃষ্ণনগর কাণ্ড

কৃষ্ণনগরে ঘটে যাওয়া একটি হৃদয়বিদারক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ নতুন তথ্য সংগ্রহ করেছে। নিহত ছাত্রীর ফোনের কল রেকর্ড বিশ্লেষণ করার পর জানা গেছে, ওই ছাত্রী তার প্রেমিককে ফোনে যোগাযোগ করতে না পেরে তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে ফোন করেছেন। এই ফোন কলগুলো ঘটনার দিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে ২১ বার হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, ওই ছাত্রীর ফোনালাপে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে, যা ঘটনার পেছনের রহস্য উন্মোচনে সহায়ক হতে পারে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত ছাত্রীর প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের এক তরুণীর সঙ্গে যুবকটির সম্পর্ক ছিল। ওই তরুণীর সঙ্গে যুবকটি একবার সিঁদুরও পরিয়েছিল। কিন্তু বছরখানেক আগে সে সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপর সামাজিক মাধ্যমে এই ছাত্রীর সঙ্গে যুবকের পরিচয় হয়। কয়েক মাস আগে যুবকটি বেঙ্গালুরুতে একটি হোটেলে কাজ করতে চলে যায় এবং ওই ছাত্রীও তার সঙ্গে যোগ দেয়।

ছাত্রীর ফোনে যুবকের নম্বর ‘হাজব্যান্ড’ নামে সেভ করা ছিল। ফেসবুকে যুবকের সঙ্গে বিয়ের কথাও বলা হয়েছিল। তবে এক মাস পরে পরিবারের চাপের কারণে তাকে ফিরে আসতে হয়। এরপর যুবকটি সোনারপুরের সেই তরুণীর সঙ্গে আবার যোগাযোগ করতে শুরু করে এবং অন্য একটি ‘বান্ধবী’র সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়।

ঘটনার দিন, ১৫ অক্টোবর, যখন ছাত্রীর ফোনে যুবকটি উত্তর দিচ্ছিল না, তখন সে যুবকের বন্ধুকে ফোন করে জানায় যে সে আত্মহত্যা করতে পারে। ছাত্রীর কথা শুনে যুবকটির বন্ধু যুবকটিকে বিষয়টি জানায়। কিন্তু যুবকটি ছাত্রীর কেরোসিন আনার খবর শুনেও কোনও গুরুত্ব দেয়নি।

তদন্তকারীদের মতে, বিকেল ৪টার দিকে যুবকের বন্ধু সোনারপুরের তরুণীকে ফোন করে ছাত্রীর কথা জানায়। রাত ১০টার কিছু আগে যুবকটি কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের মাঠে ওই বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতে বের হয়। রাত ১০টা ১২ মিনিটে বন্ধুর ফোনে ছাত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়, যেখানে যুবকটি জানায় যে সে এই সম্পর্ক শেষ করতে চায়। এই কথায় ছাত্রীর কান্নাকাটি শুরু হয় এবং আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করে।

এমন পরিস্থিতিতে তদন্তকারীদের কাছে কেরোসিনের সন্ধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যুবকটির সম্পর্কের জটিলতা এবং ছাত্রীর মানসিক অবস্থার প্রেক্ষিতে এই ঘটনাটি গভীর দৃষ্টিভঙ্গি দাবি করে। প্রেমের সম্পর্ক, বিচ্ছেদ এবং মানসিক চাপের কারণে ঘটে যাওয়া এ ধরনের ঘটনা সমাজে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করে।

এখন পুলিশ এই ঘটনার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছে, যাতে সঠিক তদন্ত করা সম্ভব হয় এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এই ঘটনার পর, সমাজের একটি অংশে এই ধরনের সম্পর্ক ও মানসিক চাপের বিষয়ে আলোচনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এখন প্রশ্ন উঠছে, প্রেমের সম্পর্কের মধ্যে সৃষ্ট এই মানসিক চাপ এবং আত্মহত্যার হুমকি কি নতুন এক দিক নির্দেশ করছে? যুবকদের মধ্যে সম্পর্কের প্রতি দায়িত্ববোধ ও সংবেদনশীলতা বাড়ানোর জন্য কি বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া উচিত? কৃষ্ণনগরের এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পেছনে এই সমস্ত প্রশ্নও সমাজের সামনে নতুন করে হাজির হচ্ছে।

Read more

Local News