পুতিনের পর এ বার জ়েলেনস্কিকে ভারতে আনার উদ্যোগ!
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সদ্যসমাপ্ত ভারত-সফর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছে। দিল্লিতে দুই দিনের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক সেরে পুতিন দেশে ফিরতেই, নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে আরও বড় এক কূটনৈতিক চমক। পুতিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তথা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কিকেও ভারতে আনার চেষ্টা শুরু করেছে নয়াদিল্লি। খবর, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁর সফর পাকা হতে পারে।
সূত্র উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, জ়েলেনস্কির ভারত সফর নিয়ে ইউক্রেন সরকারের সঙ্গে দিল্লির সক্রিয় আলোচনা চলছে। যদিও এখনও কোনও সরকারি ঘোষণা হয়নি, তবে পর্দার আড়ালে প্রস্তুতি জোরকদমে চলেছে।
নিরপেক্ষ নয়, শান্তির পক্ষে ভারত
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ভারত স্পষ্ট করেছে— তারা কোনও পক্ষ নেবে না; বরং, তারা শান্তির পক্ষে। পুতিন-জ়েলেনস্কি উভয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে ভারসাম্য রক্ষা করেছে নয়াদিল্লি। এখনও সেই নীতির ধারাবাহিকতাই বজায় রাখতে চাইছে কেন্দ্র।
২০২৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠক সারার পরে অগস্টে গিয়েছিলেন কিয়েভ। সুতরাং পুতিনের ভারত সফরের পর এবার জ়েলেনস্কির সফর হলে তা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারতের নিরপেক্ষ ভূমিকার আরও শক্তিশালী প্রমাণ হয়ে উঠবে।
২০২৬ সালের জানুয়ারিতেই আসতে পারেন জ়েলেনস্কি
কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যেই জ়েলেনস্কির দিল্লি সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর—
- যুদ্ধক্ষেত্রে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি-পরিকল্পনা কতদূর এগোয়
- ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ
- যুদ্ধ পরিস্থিতির সম্ভাব্য পরিবর্তন
বর্তমানে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে জ়েলেনস্কি নিজ দেশেও রাজনীতিক চাপের মুখে। ফলে তাঁর বিদেশ সফরের সিদ্ধান্ত সুক্ষ্ম রাজনৈতিক সমীকরণের উপর নির্ভর করছে।
ভারতের কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়াস
রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা কেনাবেচা এবং সুলভ দামে খনিজ তেল আমদানি— সব মিলিয়ে ভারত এখন রাশিয়ার অন্যতম বড় কৌশলগত অংশীদার। তারই জেরে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের রপ্তানি পণ্যে ৫০% শুল্ক আরোপ করলেও নয়াদিল্লি রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রেক্ষাপটে জ়েলেনস্কিকে ভারত সফরে আমন্ত্রণ জানানো এক বড় কূটনৈতিক বার্তা দেবে—
ভারত পক্ষপাতদুষ্ট নয়, বরং বিশ্বশান্তির পক্ষে সক্রিয় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে ইচ্ছুক।
জ়েলেনস্কির ভারত সফর কতটা ঐতিহাসিক হবে?
ইউক্রেনের রাষ্ট্রপ্রধান এর আগে মাত্র তিনবার ভারত সফর করেছেন—
- ১৯৯২
- ২০০২
- ২০১২
তাই যদি জ়েলেনস্কি এ বার ভারতে আসেন, তা শুধু দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কই নয়, বরং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও ভারতের নয়া ভূমিকার গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেবে।
কেন এ সফর গুরুত্বপূর্ণ?
- পুতিনের সফরের পরই জ়েলেনস্কির পরিদর্শন আন্তর্জাতিক মহলে শক্তিশালী ভারসাম্যের বার্তা দেবে
- ভারত বিশ্বশান্তির আলোচনায় নেতৃত্ব দিতে পারে
- রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সমঝোতা গঠনে ভারত একটি ‘সেতুবন্ধনকারী রাষ্ট্র’ হিসেবে উঠে আসতে পারে

