কুলতলিতে বাঘের সন্ধানে বনদফতরের তৎপরতা
সুন্দরবনের কুলতলি অঞ্চলে অনুপ্রবেশকারী রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে ধরতে কোমর বেঁধেছে পশ্চিমবঙ্গের বনদফতর। বুধবার সকাল থেকেই আবার শুরু হয়েছে এই বাঘ ধরার অভিযান। বনকর্মীরা জানিয়েছেন, প্রথমে জলপথে অনুসন্ধান চালানো হবে। মাকড়ি নদী পেরিয়ে বাঘ অন্যত্র চলে গিয়েছে কি না, সেটাই এখন প্রধান লক্ষ্য। নদীর পাড়ে যদি বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়া যায়, তবে তার অবস্থান নির্ধারণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কুলতলির গ্রামাঞ্চলে আতঙ্ক
কুলতলির মৈপিঠ অঞ্চলের উত্তর বৈকুন্ঠপুর সংলগ্ন জঙ্গলে বাঘের আতঙ্ক এখনও রয়েছে। সোমবার সকালে বৈকুন্ঠপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্রীকান্ত পল্লি ও কিশোরীমোহনপুর এলাকার জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে বনদফতরের কর্মীরাও অনুসন্ধানে যোগ দেন। তবে গত দুই দিন ধরে জঙ্গল চষে ফেলেও বাঘটিকে দেখতে পাননি তাঁরা।
বাঘের উপস্থিতি নিয়ে যদিও গ্রামবাসীদের মধ্যে কোনও সন্দেহ নেই। কখনও তার গর্জন, কখনও আবার পায়ের ছাপ রেখে নিজের উপস্থিতির প্রমাণ দিয়েছে এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। তবে তাকে খুঁজে বের করা এবং বাগে আনা এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

বাঘ ধরার চেষ্টা ও চ্যালেঞ্জ
বনদফতর একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে বাঘ ধরার জন্য। বাঘটিকে এলাকা ছাড়া করার জন্য শব্দবাজি ফাটানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও বাঘ তার অবস্থান বদলেছে মাত্র, এলাকা ছাড়েনি। মঙ্গলবার বনকর্মীরা দেখেন, বাঘটি উত্তর-পূর্ব দিকে সরেছে এবং উত্তর জগদ্দল সংলগ্ন নদীর ধারে তার পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে। এরপর প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকা জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় এবং একটি খাঁচা পাতা হয়।
খাঁচার ভেতরে টোপ হিসেবে মাংস রাখা হলেও বাঘ সেই ফাঁদে ধরা দেয়নি। বনকর্মীদের ধারণা, বাঘটি জঙ্গলের আরও গভীরে লুকিয়ে থাকতে পারে। এখন জলপথে অনুসন্ধান চালিয়ে জঙ্গলের তিন দিক ঘুরে দেখা হবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
জলপথে অনুসন্ধান শেষে, জঙ্গলে বাঘের উপস্থিতি টের পেলে বনদফতর আরও ব্যবস্থা নেবে। জানা গিয়েছে, সেই ক্ষেত্রে জঙ্গলের মধ্যে মাচা তৈরি করে ঘুমপাড়ানি গুলি ব্যবহার করা হতে পারে। বনদফতরের প্রাথমিক লক্ষ্য বাঘটিকে ধরে জঙ্গলের গভীরে ফিরিয়ে পাঠানো।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্কবার্তা
বনদফতর স্থানীয় গ্রামবাসীদের সতর্ক করেছে এবং অনুরোধ করেছে তারা যেন জঙ্গলের কাছে না যান। বাঘের উপস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে, তাই সবাইকে সাবধানে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কেন এতো তৎপর বনদফতর?
রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে তাদের গ্রামাঞ্চলে চলে আসা মানুষের জন্য বিপজ্জনক। বনদফতর চায় বাঘটিকে অক্ষত অবস্থায় জঙ্গলে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে, যাতে মানুষ ও প্রাণী উভয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
উপসংহার
কুলতলির এই ঘটনা সুন্দরবনের প্রকৃতি এবং মানুষের সহাবস্থানের চ্যালেঞ্জকে আরও একবার সামনে এনেছে। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণ হলেও, যখন তারা মানুষের বসতির দিকে চলে আসে, তখন তা হয়ে ওঠে সমস্যার কারণ। বনদফতরের এই প্রচেষ্টা শুধুমাত্র একটি বন্যপ্রাণী উদ্ধার অভিযান নয়, বরং এটি প্রকৃতির প্রতি মানুষের দায়বদ্ধতার একটি উদাহরণ।
এখন দেখার বিষয়, বনদফতর তাদের পরিকল্পনায় কতটা সফল হয় এবং কুলতলির গ্রামবাসীদের মধ্যে বাঘের আতঙ্ক কবে শেষ হয়।

