Monday, February 24, 2025

কুম্ভমেলার গঙ্গার জল স্নানের উপযুক্ত নয়! কেন্দ্রের রিপোর্টে উদ্বেগ, যোগী সরকারের কাছে জবাব তলব

Share

কুম্ভমেলার গঙ্গার জল স্নানের উপযুক্ত নয়

প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলার গঙ্গার জল স্নানের জন্য উপযুক্ত নয়—এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাম্প্রতিক রিপোর্টে। জাতীয় পরিবেশ আদালতে জমা দেওয়া এই রিপোর্টে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, গঙ্গা, যমুনা ও অন্তঃসলিলা সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলে জলের মান ব্যাকটেরিয়াযুক্ত এবং বিপজ্জনক। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে তলব করেছে আদালত এবং দ্রুত ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কী বলছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট?

কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের অধীনস্থ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, জানুয়ারির ১২-১৩ তারিখে নদীর জল পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেই পরীক্ষায় দেখা যায়, বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড (বিওডি)-এর নিরিখে এই জল স্নানের জন্য নিরাপদ নয়। এছাড়াও, ফিকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি পাওয়া গেছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কুম্ভমেলার সময় পুণ্যার্থীদের বিশাল ভিড় ও ‘শাহি স্নান’-এর কারণে জল আরও দূষিত হয়ে পড়তে পারে। নদীর জলে নিকাশি বর্জ্য মিশে ব্যাকটেরিয়ার মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে, যা থেকে ত্বকের রোগ, জ্বর এবং পানিবাহিত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ফিকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া কতটা বিপজ্জনক?

ফিকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া সাধারণত নিকাশি বর্জ্য বা মানুষের মল থেকে নদীর জলে মিশে যায়। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্ধারিত সীমা অনুযায়ী, প্রতি ১০০ মিলিলিটার জলে ২৫০০-এর বেশি ফিকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া থাকলে তা অত্যন্ত বিপজ্জনক। প্রয়াগরাজের জলে এই মাত্রা কতটা বেশি, সে বিষয়ে এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করা হয়নি, তবে রিপোর্ট অনুযায়ী অবস্থা উদ্বেগজনক।

পরিবেশ আদালতের হস্তক্ষেপ

এই পরিস্থিতিতে, বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পরিবেশ আদালত উত্তরপ্রদেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে জবাবদিহির নির্দেশ দিয়েছে। আদালত জানতে চেয়েছে, নদীর দূষণ কমাতে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে? কুম্ভমেলার সময় জলের মান ঠিক রাখতে কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, সে সম্পর্কেও বিস্তারিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

এর আগে, পরিবেশ আদালত উত্তরপ্রদেশ সরকারকে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল। কিন্তু রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কেবলমাত্র জলের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিয়েছে। আদালতের অসন্তোষের পর এবার বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও পদক্ষেপের হিসাব দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই রিপোর্ট?

প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী কুম্ভমেলায় আসেন এবং গঙ্গাস্নান করেন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই স্নান পাপ মুক্তি ও আত্মশুদ্ধির প্রতীক। কিন্তু যদি জলেই ব্যাকটেরিয়া ও দূষণ থাকে, তবে তা শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকিই নয়, ধর্মীয় ও আস্থার ক্ষেত্রেও বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দেবে।

পরিবেশবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই গঙ্গা পরিষ্কার রাখার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। কিন্তু কুম্ভমেলার মতো বিশাল উৎসবের সময়েও যদি নদীর জল স্নানের উপযোগী না হয়, তবে সরকারের গঙ্গা দূষণ রোধ প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।

শেষ কথা

পরিবেশ আদালতের হস্তক্ষেপের পর উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয়, তা এখন দেখার বিষয়। কুম্ভমেলার পুণ্যার্থীদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে দ্রুত জল পরিশোধন ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। অন্যথায়, ধর্মীয় বিশ্বাস ও বাস্তবতাকে একসঙ্গে মিলিয়ে দেখা কঠিন হয়ে পড়বে।

মাটির নীচ থেকে গর্জনের শব্দ! ভূমিকম্পের নতুন অভিজ্ঞতায় আতঙ্কিত দিল্লিবাসী— কেন হল এমন?

Read more

Local News