Monday, December 1, 2025

কিশোরদের মগজধোলাই করে আত্মঘাতী বোমারু তৈরি ছিল মুর্শিদাবাদে ধৃত জঙ্গিদের লক্ষ্য! পুলিশের দাবি

Share

র্শিদাবাদে ধৃত জঙ্গিদের লক্ষ্য কি?

মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থেকে গ্রেফতার হওয়া দুই জঙ্গি মিনারুল শেখ এবং মহম্মদ আব্বাসের মূল উদ্দেশ্য ছিল কিশোরদের মগজধোলাই করে আত্মঘাতী বোমারু (সুইসাইড বম্বার) হিসেবে গড়ে তোলা। অসম পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর দাবি, ধৃতরা জঙ্গি সংগঠন আনসার-উল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য। তাদের পরিকল্পনা ছিল পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় নাশকতার ঘটনা ঘটানো।

প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল কিশোর-কিশোরীরা

ধৃতদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, তারা প্রথমে মুর্শিদাবাদের ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করত। এরপর স্থানীয় মাদ্রাসায় তাদের নিয়ে যাওয়া হত, যেখানে ছোট ছোট মাদ্রাসাগুলিতে এলইডি স্ক্রিনে বাংলাদেশের জঙ্গি নেতাদের বক্তৃতা দেখানো হতো। মগজধোলাইয়ের পর তাদের দেওয়া হতো অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ শেষে তাদের পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পাঠানোরও পরিকল্পনা ছিল। শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, নদিয়া, উত্তর দিনাজপুর এবং আলিপুরদুয়ারেও এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য অন্তত ৩০ জন কিশোর-কিশোরীকে সুইসাইড বম্বার হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছিল।

কেরলে গ্রেফতার আরও এক সন্দেহভাজন

কেরল থেকে গ্রেফতার হওয়া শাব আলি নামে আরেক সন্দেহভাজন এই চক্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। জানা গেছে, তিনি আগে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার কেদারতলায় থাকতেন। ধৃতদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। শাব স্থানীয় আনসার-উল্লাহ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকেও অংশ নিয়েছিল এবং মুর্শিদাবাদসহ আশপাশের জেলাগুলোতে ছোট মাদ্রাসায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা করেছিল।

উত্তরবঙ্গের নাশকতার ছক

অসম পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, ধৃতরা উত্তর দিনাজপুর এবং শিলিগুড়ি করিডরের চারটি গ্রামে নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। বিএসএফ আউটপোস্ট এবং জেলা পুলিশের দফতরকে টার্গেট করে হামলার ছক কষা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় মহিলাদের আর্থিক সাহায্য দিয়ে তাদের কাজে লাগানো হচ্ছিল। মহিলাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বিএসএফ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম ব্যাহত করার পরিকল্পনা ছিল।

আন্তর্জাতিক জঙ্গি চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ

পুলিশ জানিয়েছে, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের একাধিক জঙ্গি সংগঠনের প্রত্যক্ষ সহায়তায় এই চক্রটি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নাশকতার ছক কষেছিল। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এখনও কয়েকজন জঙ্গি আত্মগোপন করে রয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য পুলিশ বাহিনীকে বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধারে তৎপর পুলিশ

অসম পুলিশের স্পেশ্যাল ডিজি হরমিত সিংহ বলেন, “ধৃতদের জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও বড় নাশকতার পরিকল্পনার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। জিজ্ঞাসাবাদে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।”

উপসংহার

মুর্শিদাবাদসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় জঙ্গি কার্যকলাপ এবং কিশোর-কিশোরীদের টার্গেট করে আত্মঘাতী বোমারু তৈরির মতো ঘটনা রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি প্রশ্ন তুলছে। পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর যৌথ উদ্যোগে এই ধরনের ষড়যন্ত্র রুখতে তৎপরতা আরও বাড়ানো দরকার। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়িয়ে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করে এই ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে।

Read more

Local News