কিডনির অসুখে সতর্কতার সিগন্যাল!
কিডনির অসুখ ধরা পড়া মানেই জীবনযাপনে বড় পরিবর্তন আনা জরুরি— বিশেষ করে খাবারদাবারে। অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া, দীর্ঘ সময় জল না খাওয়া, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত বা বাইরের খাবারের ওপর নির্ভরতা— এসবই কিডনির সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিডনিতে সংক্রমণ, পাথর, অথবা কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। যে কোনও বয়সেই দেখা দিতে পারে এই সমস্যা। তাই রোগ ধরা পড়ার পর প্রথম থেকেই সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
কিডনি আক্রান্ত হলে রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে প্রোটিন, ক্রিয়েটিনিন, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, শর্করা ইত্যাদির মাত্রা জানা জরুরি। রোগ অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি না ক্রনিক কিডনি ফেলিয়োর, তার ওপর নির্ভর করে খাদ্য তালিকা নির্ধারিত হয়। অ্যাকিউট সমস্যায় প্রোটিনে অত কড়াকড়ি না থাকলেও, ক্রনিক রোগীদের ক্ষেত্রে প্রোটিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়। আবার ডায়ালিসিস শুরু হলে প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ানো হয়। অর্থাৎ প্রতিটি অবস্থায় ডায়েট আলাদা— তাই পুষ্টিবিদের পরামর্শ অপরিহার্য।
এখন জেনে নেওয়া যাক, কিডনির সমস্যা থাকলে কোন পাঁচ ধরনের খাবার বা অভ্যাস একেবারে এড়িয়ে চলা উচিত।
১) অতিরিক্ত জল, সফ্ট ড্রিঙ্ক, অ্যালকোহল— সবই ক্ষতিকর
কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে কতটা জল খাওয়া উচিত, তা চিকিৎসক নির্দিষ্ট করে দেন।
চিকিৎসকের অনুমতির বেশি জল খেলে শরীরের ফ্লুইড জমে গিয়ে হৃদ্যন্ত্র বা শ্বাসযন্ত্রে চাপ তৈরি হতে পারে।
তাই—
- সফ্ট ড্রিঙ্ক
- এনার্জি ড্রিঙ্ক
- অ্যালকোহল
- অতিরিক্ত তরল পানীয়
সবই সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা উচিত। অনেকেই ভাবেন বেশি জল খাওয়া ভালো— কিন্তু কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে এই ধারণাই বিপদ ডেকে আনতে পারে।
২) উচ্চ পটাশিয়াম ও ফসফরাসযুক্ত ফল-সবজি
কিডনির রোগীদের পক্ষে সবচেয়ে ক্ষতিকারক দুই খনিজ— পটাশিয়াম ও ফসফরাস।
কিডনি দুর্বল হলে এই দু’টি উপাদান শরীরে জমে গিয়ে হৃদ্যন্ত্র ও স্নায়ুর ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
যে ফলগুলি একেবারেই নয়:
- কলা
- আম
- খেজুর
- কমলা
যে সবজি নয়:
- আলু
- টমাটো
- অধিকাংশ সবুজ শাকসবজি
শাক খেতেই হলে বিশেষ নিয়ম মানতে হয়—
কাটা শাক জলে ভিজিয়ে রাখা, পরে গরম জলে ডুবিয়ে ধুয়ে রান্না করা। এতে পটাশিয়ামের পরিমাণ কিছুটা কমে।
৩) দুগ্ধজাত খাবার ও বীজজাত প্রোটিন
দুধ, দই, ছানা, পনির— সবকিছুতেই প্রচুর ফসফরাস।
ডাল, মটর, ছোলা, বীজজাত প্রোটিনেও ফসফরাসের মাত্রা অনেক।
তাই কিডনির রোগীদের এগুলি কম খেতে বলা হয় বা অনেকের ক্ষেত্রে পুরোপুরি নিষেধ করা হয়।
ফসফরাস বাড়লে হাড়ের ক্ষয়, চর্মরোগ এবং ক্যালসিয়াম ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে।
৪) সোডিয়াম বা নুন–সমৃদ্ধ খাবার
কিডনি রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাই মূল লক্ষ্য।
নুন বেশি খেলেই বিপদ—
তাই:
- সস
- আচার
- চিপ্স
- চিজ
- প্যাকেটজাত খাবার
- ফাস্ট ফুড
এসব পুরোপুরি বাদ দেওয়া প্রয়োজন। রান্নার নুনও সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে।
৫) ব্যথানাশক ওষুধ— সবচেয়ে বিপজ্জনক অভ্যাস
হাঁটু ব্যথা, মাথা ব্যথা, সর্দি— এসব হলেই অনেকেই নিজের মতো ব্যথানাশক খেয়ে নেন।
কিন্তু NSAID ধরনের ব্যথার ওষুধ কিডনির ক্ষতি বহুগুণ বাড়ায়।
কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক বিপজ্জনক।
তাই চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া কোনও ব্যথানাশক ওষুধ না খাওয়াই শ্রেয়।

