পহেলগাঁও হামলার পর কান্না মেশানো কণ্ঠে স্মৃতিচারণ সেলিনার
কাশ্মীর… প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, ইতিহাস আর ধর্মীয় ঐতিহ্যের কেন্দ্রস্থল। কিন্তু সেই ভূস্বর্গেই যেন থমকে ছিল ছোট্ট এক মেয়ের শৈশব। বলিউড অভিনেত্রী সেলিনা জেটলি, যিনি বড় হয়েছেন উত্তর ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে—কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড ও অরুণাচল ঘুরে তাঁর কৈশোর কেটেছে ভয়, অনিশ্চয়তা আর প্রশ্নে মোড়া পরিবেশে।
সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর সেই পুরনো ক্ষত যেন আবার জেগে উঠেছে সেলিনার মনে। এক আবেগঘন বার্তায় তিনি বললেন, “কাশ্মীরের মতো ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ, সাংস্কৃতিক এবং শৈব ধর্মের শিকড় গেঁথে থাকা এক জায়গায় এই হিংসা সত্যিই মানা যায় না।”
সেলিনার বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন আধিকারিক। সেই সূত্রেই ছোটবেলা কেটেছে সেনা পরিবেষ্টিত অঞ্চল উধমপুরে। আর্মি পাবলিক স্কুলের ছাত্রী সেলিনা তখন প্রায় প্রতিদিনই জিজ্ঞেস করতেন তাঁর মাকে—“আমাদের কেন বন্দুকধারী সেনাদের সঙ্গে স্কুলে যেতে হয়?” ছোট বয়সেই ভয় ছিল নিত্যসঙ্গী। খেলতে যাওয়া মানেই চারপাশে সন্ত্রস্ত নজর, ফুল তুলতে যাওয়ার আগে চোখ রাখতে হতো সেনা প্রহরীর দিকে।
তিনি বলেন, “উত্তরাখণ্ডের রানিক্ষেতে আমার শৈশব কেটেছিল অনেকটাই শান্তিতে। কিন্তু কাশ্মীরে এসে বুঝলাম, এখানে ভয়ই নিত্যদিনের সঙ্গী। না গাছ থেকে ফুল পাড়তে পারতাম, না নির্ভয়ে খেলতে পারতাম। শিশু বয়সেও বুঝে গিয়েছিলাম, আমাদের জীবনের ছন্দ অন্যদের চেয়ে ভিন্ন।”
পহেলগাঁওয়ের সাম্প্রতিক হামলা সেই ভয়, অসহায়ত্ব আর সংকটকে যেন আবার ফিরিয়ে আনল সেলিনার জীবনে। তার কণ্ঠে ফুটে উঠল একটাই আকুতি—“এই হিংসা বন্ধ হোক। শিশুদের যেন আর বন্দুকের ছায়ায় বেড়ে উঠতে না হয়।”
কাশ্মীরের শান্ত-স্নিগ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, হিমালয়ের কোলে গড়ে ওঠা শৈব দর্শনের গভীর ঐতিহ্য আর লৌকিক সংস্কৃতি—এসবই এক সময় মানুষের গর্বের বিষয় ছিল। কিন্তু সেই ছবির ফাঁকেই ঢুকে পড়েছে সন্ত্রাস, বিভেদ আর রক্তের দাগ। আর তা কেবল রাজনীতির স্তরে নয়, গিয়ে লেগেছে শিশুমনের উপরেও।
সেলিনার এই আক্ষেপ শুধুই একজন অভিনেত্রীর নয়, এটি হাজারো সেনা পরিবারের অভিজ্ঞতা। তাদের ছেলেমেয়েরা যেমন ছোট থেকে স্কুলে যায় বন্দুকের প্রহরায়, তেমনই তাঁদের শৈশব কেটে যায় চিরস্থায়ী নিরাপত্তার অভাব নিয়ে।
অবশেষে, সেলিনার প্রার্থনা কেবল নিজের জন্য নয়—তিনি চান, ভবিষ্যতের শিশুরা যেন কাশ্মীরকে দেখে শুধুই তার সৌন্দর্য ও ইতিহাস দিয়ে, না যে কাঁধে অস্ত্র দেখে বা শৈশবে ভয় নিয়ে ঘুমোয়। কাশ্মীর যেন আবার ফিরে পায় তার হারানো শান্তি।
বিএসএফ কর্তাদের আশ্বাসেও থেমে নেই উৎকণ্ঠা, সোমবার পঞ্জাব যাচ্ছেন পূর্ণমের স্ত্রী