Friday, February 21, 2025

কালীঘাট মেট্রোতে গার্ড রেল: আত্মহত্যা রোধ নাকি যাত্রীদের অসুবিধা?

Share

কালীঘাট মেট্রোতে গার্ড রেল

সম্প্রতি কলকাতার মেট্রো রেল পরিষেবায় বড় পরিবর্তন এসেছে, বিশেষ করে কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে। আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় প্ল্যাটফর্ম জুড়ে গার্ড রেল বসানো হয়েছে। তবে এই নতুন ব্যবস্থা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ উদ্যোগটিকে স্বাগত জানালেও, অনেক যাত্রী এর ফলে ভোগান্তির অভিযোগ তুলেছেন।

আত্মহত্যার ঘটনা রুখতে কালীঘাটে গার্ড রেল

কিছু মাস ধরে মেট্রোর লাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। চাঁদনি চক, কালীঘাট এবং আরও কিছু স্টেশনে একাধিকবার এমন দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সকালেই চাঁদনি চক স্টেশনে এক মহিলা তার মেয়ের হাত ছেড়ে লাইনে ঝাঁপ দেন, যা মর্মান্তিক পরিণতির দিকে এগিয়েছিল। এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ কালীঘাট স্টেশনে গার্ড রেল বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্ল্যাটফর্মের আপ এবং ডাউন লাইনের সীমানায় সারি সারি গার্ড রেল বসানো হয়েছে। যেখানে মেট্রোর দরজা থামে, সেই অংশ ছেড়ে বাকি অংশে এই রেলগুলো বসানো হয়েছে। এর ফলে, যাত্রীরা ট্রেন থামলে ওই ফাঁকা অংশ দিয়ে উঠতে এবং নামতে পারবেন। এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, আত্মহত্যার চেষ্টা রোধ করা।

যাত্রীদের প্রতিক্রিয়া: স্বস্তি এবং অসুবিধা

গার্ড রেল বসানোর পর কিছু যাত্রী উদ্যোগটিকে ইতিবাচকভাবে দেখেছেন। তাঁদের মতে, আত্মহত্যার ঘটনা রোধ করার জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরনের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায়, মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব এবং মেট্রোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার দাবি উঠেছে। তাই গার্ড রেল বসানোর সিদ্ধান্তকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন।

তবে, অন্যদিকে অনেক যাত্রী এই ব্যবস্থাকে সমস্যাজনক বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, যদি কোনও মেট্রো ট্রেন সামান্য এগিয়ে বা পিছিয়ে থামে, তাহলে গার্ড রেলের কারণে মেট্রোর দরজা ঢেকে যায়। এর ফলে যাত্রীদের উঠতে এবং নামতে অসুবিধা হচ্ছে। অনেক যাত্রী জানান, বিশেষত ভিড়ের সময় এই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে ওঠে।

স্বয়ংক্রিয় দরজার দাবি

যাত্রীদের একাংশের প্রশ্ন, কেন ব্লু লাইনের মতো পুরোনো রুটগুলিতে গ্রিন লাইনের মতো স্বয়ংক্রিয় ‘স্ক্রিন’ দরজা বসানো হয় না? স্বয়ংক্রিয় দরজার ব্যবস্থা থাকলে, ট্রেনের চলাচল আরও নিয়ন্ত্রিত হতে পারত এবং এই ধরনের ঘটনাও কমে যেত। মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছে, ব্লু লাইন তুলনামূলকভাবে পুরোনো হওয়ায় সেখানে এই ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করা আপাতত সম্ভব নয়। ব্লু লাইনের প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো স্বয়ংক্রিয় দরজার মতো উন্নত সিস্টেমের জন্য উপযুক্ত নয় বলে দাবি করেছেন মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ।

মেট্রোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন পদক্ষেপ

মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আত্মহত্যার চেষ্টা রুখতে প্রতি স্টেশনে ‘পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম’-এর মাধ্যমে ঘোষণা করা হয়। এতে যাত্রীদের প্ল্যাটফর্মের ধার ঘেঁষা হলুদ লাইন অতিক্রম না করতে সতর্ক করা হয়। যদি কোনও যাত্রীকে প্ল্যাটফর্মের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, তবে আরপিএফ (রেলওয়ে পুলিশ ফোর্স) কর্মীরা তাকে সরে আসার অনুরোধ করেন। গার্ড রেলের সঙ্গে এই সুরক্ষা ব্যবস্থাও কার্যকরীভাবে চলবে বলে মেট্রো কর্তৃপক্ষ আশাবাদী।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

যদিও গার্ড রেল বসানোর মাধ্যমে আত্মহত্যার ঘটনায় কিছুটা রাশ টানা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে, কিন্তু যাত্রীদের অভিযোগ এবং প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের কারণে মেট্রো রেলের এই পদক্ষেপ আরও উন্নত সমাধানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

মেট্রো রেলের প্রতিক্রিয়া

যদিও কালীঘাট স্টেশনে গার্ড রেল বসানো হয়েছে, মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানান, “এ ব্যাপারে আমি এখনও কিছু জানি না। জেনে নিয়ে জানাতে পারব।” মেট্রো রেলের এই নীরবতা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে আরও জল্পনা তৈরি হয়েছে।

এই উদ্যোগ যাত্রী নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও, এর সঠিক কার্যকারিতা এবং যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করা মেট্রো কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Read more

Local News