Friday, January 31, 2025

‘কালীঘাটের কাকু’র জামিন মঞ্জুর: সিবিআইয়ের ‘শোন অ্যারেস্ট’ পরিকল্পনায় ধাক্কা, জেলমুক্তির সম্ভাবনা

Share

‘কালীঘাটের কাকু’র জামিন

নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় কলকাতা হাই কোর্ট থেকে জামিন পেলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’। শুক্রবার আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করে। ইডির মামলায় দীর্ঘদিন প্রেসিডেন্সি জেলে থাকা এই প্রভাবশালী ব্যক্তিকে সিবিআই ‘শোন অ্যারেস্ট’ (গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে পুনরায় গ্রেফতার করার প্রক্রিয়া) করতে চেয়েছিল। তবে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সশরীরে হাজিরা না দেওয়ার কারণে এই প্রক্রিয়া এখনও সম্পন্ন হয়নি। ফলে জামিন পাওয়ার পর সুজয়কৃষ্ণের জেলমুক্তি প্রায় নিশ্চিত বলে ধারণা।

জামিনের শর্ত এবং নির্দেশ

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ তিনটি শর্তে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের জামিন মঞ্জুর করেছেন:

  1. মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও তথ্য বা প্রমাণ নষ্ট করা যাবে না।
  2. কোনও সাক্ষীকে প্রভাবিত করা যাবে না।
  3. পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে এবং আদালতের অনুমতি ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ। এমনকি, নিম্ন আদালতের এলাকার বাইরেও যেতে পারবেন না।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলা: প্রেক্ষাপট ও তদন্ত

সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, যিনি ‘কালীঘাটের কাকু’ নামে পরিচিত, নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে ইডির হাতে গ্রেফতার হন। মামলার তদন্ত চলাকালীন তাঁর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেই সময় থেকে তিনি প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি ছিলেন।

কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই এই মামলায় নতুন করে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ‘শোন অ্যারেস্ট’ করতে চেয়েছিল। নিম্ন আদালতে এ নিয়ে সিবিআইয়ের আবেদন মঞ্জুর হয়। সিবিআই জানায়, তদন্তের প্রয়োজনে সুজয়কৃষ্ণের হেফাজত প্রয়োজন। তবে আদালত স্পষ্ট করে জানায়, সশরীরে হাজির না হলে তাঁকে হেফাজতে নেওয়া যাবে না।

‘অসুস্থতা’ ও আদালতে হাজিরা এড়ানো

সুজয়কৃষ্ণের অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে জেল কর্তৃপক্ষ একাধিকবার আদালতে মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দেয়। এতে বলা হয়, তিনি জেলের হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং শারীরিক অবস্থার কারণে তাঁকে সশরীরে আদালতে হাজির করানো সম্ভব নয়। পরপর চারবার হাজিরার নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও আদালতে যাননি তিনি।

তাঁর অনুপস্থিতির কারণে সিবিআই এখনও তাঁকে হেফাজতে নিতে পারেনি। এর মধ্যেই তিনি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন সিবিআই গ্রেফতারের আশঙ্কায়।

সিবিআইয়ের চ্যালেঞ্জ এবং মামলার ভবিষ্যৎ

সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘কাকু’র কণ্ঠস্বরের নমুনা প্রয়োজন, যা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে তাঁকে সশরীরে হাজির না করানো গেলে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।

শুক্রবারের হাই কোর্টের রায়ের পর সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের জেলমুক্তি প্রায় নিশ্চিত। যদিও সিবিআইয়ের দাবি, তাঁকে হেফাজতে নেওয়া গেলে তদন্ত আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো।

প্রভাব এবং ভবিষ্যৎ প্রক্রিয়া

আইনজীবীদের মতে, এই রায় ‘শোন অ্যারেস্ট’ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সিবিআইয়ের তদন্তের গতিপ্রকৃতিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়।

এদিকে, সুজয়কৃষ্ণের জামিন প্রাপ্তি এবং জেল থেকে মুক্তির সম্ভাবনা নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও হাই কোর্টের দেওয়া শর্ত ভঙ্গ হলে তাঁর বিরুদ্ধে নতুন করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।

এই ঘটনায় আদালতের রায় যেমন সুজয়কৃষ্ণের জন্য স্বস্তি নিয়ে এসেছে, তেমনি সিবিআইয়ের জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা। তবে মামলার জটিলতা এবং কেন্দ্রীয় সংস্থার পদক্ষেপের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী প্রক্রিয়া নির্ভর করবে।

Read more

Local News