রিয়ার চোখে ধরা পড়ল বন্দি মহিলাদের নিঃশব্দ কান্না!
রিয়া চক্রবর্তী। বলিউডের এই অভিনেত্রীর নাম এক সময় সংবাদের শিরোনামে ছিল। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে চর্চা তুঙ্গে পৌঁছেছিল। মাদক সংযোগের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়। ২৭ দিন কারাবাসে কাটাতে হয়েছিল তাঁকে।
যদিও সিবিআই-এর চূড়ান্ত রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে, সুশান্তের মৃত্যু ছিল আত্মহত্যা। রিয়ার বিরুদ্ধে আর কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ছাড়পত্র পেয়েছেন তিনি। তবে সেই সময়ের কারাবাসের অভিজ্ঞতা তাঁকে গেঁথে দিয়েছে গভীর ভাবে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সেই কঠিন সময়ের কথা প্রকাশ্যে আনলেন রিয়া।
🧍♀️ কারাগারের সমাজ: যেখানে নাম নয়, শুধুই সংখ্যা
কারাগারের ভেতরের পরিবেশ নিয়ে বলতে গিয়ে রিয়া জানান, বাইরের সমাজের সঙ্গে কারাগারের কোনও মিল নেই। সেখানে নেই কোনও সামাজিক পরিচয়, নেই নামের কদর। প্রত্যেক বন্দি কেবল একটি সংখ্যা।
রিয়া বলেন,
“কারাগারের মধ্যে কোনও পরিচিতি থাকে না। বাইরে আমি রিয়া চক্রবর্তী, কিন্তু ভেতরে আমি ছিলাম শুধুই একটা সংখ্যা।”
সেখানে কেউ অভিনেত্রী, কেউ গৃহবধূ, কেউ আবার শ্রমিক — এই পার্থক্য বিলীন হয়ে যায়। সকলেই সমান।
🚸 ৮০ শতাংশ মহিলা নির্দোষ!
রিয়ার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, কারাগারে বন্দি বেশিরভাগ মহিলাই নির্দোষ। তিনি বলেন,
“আমার দেখা মতে, ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মহিলা আসলে নির্দোষ। অনেকেই অন্যায়ভাবে ফেঁসে গিয়েছেন। বাকিরা অপরাধ স্বীকার করেছেন, তবে তাঁদের অধিকাংশই বাধ্য হয়ে তা করেছেন। হয় নিজেকে বাঁচানোর জন্য, নয়তো চরম পরিস্থিতিতে পড়ে।”
এই মহিলাদের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগেই বছরের পর বছর জেলবন্দি থাকতে হয়। কেউ কেউ সাত-আট বছর কেটে ফেলেন আদালতের রায়ের অপেক্ষায়।
📵 বিচ্ছিন্ন জীবন: যখন বাইরের জগৎ শুধু স্মৃতি
কারাগারে থাকতে গিয়ে রিয়া বুঝেছেন, বাইরের পৃথিবী যেন ধীরে ধীরে অজানা হয়ে যায়। সেখানে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ, বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় অসম্ভব।
তিনি বলেন,
“কারাগারের মধ্যে একটা দিন যেন এক বছরের মতো লাগে। অনেকেই সেখানে পরিবারের সদস্যদের হারান। দীর্ঘদিন ধরে বাইরের কারও খবরও পান না। এটা সত্যিই অমানবিক।”
🖤 মানসিক যন্ত্রণার সাক্ষী
কারাবাস শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ভাবেও চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়। রিয়া বলেন,
“কারাগারের অন্ধকার শুধু চারপাশের দেয়ালে নয়, সেটা মনের ভেতরেও চেপে বসে। প্রতি মুহূর্তে একটা অজানা আতঙ্ক আর অবসাদ গ্রাস করে ফেলে। আমি নিজেও সেই অন্ধকার দেখেছি, অনুভব করেছি।”
তাঁর কথায় স্পষ্ট, কারাগারের সেই দিনগুলো শুধুই এক অমানবিক অভিজ্ঞতা নয়, বরং একটা মানসিক যুদ্ধ।
🌿 নতুন দিশা, নতুন লড়াই
ছাড়পত্র পাওয়ার পরেও রিয়া চক্রবর্তীর জীবনে সেই দিনগুলোর ছায়া রয়ে গেছে। তবে তিনি হার মানেননি। বরং সাহসী স্বর হয়ে উঠেছেন বন্দি মহিলাদের হয়ে।
তিনি বিশ্বাস করেন,
“আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। যারা নির্দোষ, তাদের জন্য বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত করা উচিত, যাতে তারা অন্যায়ভাবে বছরের পর বছর বন্দি না থাকেন।”
রিয়া চক্রবর্তীর কণ্ঠস্বর এখন শুধুই একজন প্রাক্তন বন্দির নয়, বরং সত্যের খোঁজে লড়াই করা এক নারীর প্রতিবাদ। তাঁর অভিজ্ঞতা হয়তো একদিন আরও অনেক নিরপরাধ মানুষের মুক্তির পথ দেখাবে।