কাবুলের সেরা হোটেলের দখল নিল তালিবান সরকার!
কাবুলের সেরেনা হোটেল, আফগানিস্তানের অন্যতম বিলাসবহুল হোটেলটি, গত দুই দশক ধরে ছিল ‘আগা খান ফান্ড ফর ইকনমিক ডেভেলপমেন্ট’-এর অধীনে। এই হোটেলটি পরিচিত ছিল বিদেশি অতিথিদের প্রধান ঠিকানা হিসেবে, যেখানে থাকতেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক dignitaries, ব্যবসায়ী, ও পর্যটকরা। কিন্তু সম্প্রতি, এক অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তে, তালিবান সরকার হোটেলটির মালিকানা গ্রহণ করেছে।
শুক্রবার হোটেল কর্তৃপক্ষ আচমকাই ঘোষণা করেছিল যে, সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করা হবে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হোটেলটি বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে, এটি কোনো পরিকল্পিত পরিবর্তন হিসেবে মনে হয়নি, তবে পরে জানা যায় যে তালিবান সরকার হোটেলটি অধিগ্রহণ করেছে। হস্তান্তরের শর্ত সম্পর্কে কোন পক্ষই বিস্তারিত কিছু জানায়নি, যা পরিস্থিতি আরও রহস্যময় করে তোলে।
দ্বিতীয় দিন, অর্থ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানায় যে, সেরেনা হোটেল আবার চালু করা হবে এবং এটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘এইচএসওলি’ পরিচালনা করবে। তালিবান সরকারের একটি সূত্র জানায়, এই পদক্ষেপের পেছনে রয়েছে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলসহ অন্যান্য শহরে পশ্চিম এশিয়ার ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর আফগান শাখা আইএস-খোরাসান (আইএস-কে)-এর ধারাবাহিক হামলা। এই হামলার প্রেক্ষিতে, বিদেশি অতিথিদের নিরাপত্তার খোলনলচে বদলে দেওয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনাটি একেবারে নতুন নয়, কারণ তালিবান শাসনামলের পূর্বেও সেরেনা হোটেল ছিল হামলার লক্ষ্য। ২০০৮ সালে প্রথমবার তালিবান সেরেনা হোটেলে হামলা চালিয়েছিল, যাতে আমেরিকার নাগরিক থর ডেভিড হেসলা-সহ আট জনের মৃত্যু হয়েছিল। পরে ২০১৪ সালেও সেখানে একটি আক্রমণ হয়। সম্প্রতি, ২০০৮ সালের হামলার ষড়যন্ত্রের কথা স্বীকার করেছেন ভারপ্রাপ্ত বিদেশমন্ত্রী সিরাজউদ্দিন হক্কানি, যিনি কাবুলের ভারতীয় দূতাবাসে দু’বার ফিদায়েঁ হামলা চালানোর জন্য পরিচিত।
হোটেলটি অধিগ্রহণ করার মাধ্যমে, তালিবান সরকারের লক্ষ্য হলো বিদেশি পর্যটকদের কাছে নিরাপত্তার এক নতুন বার্তা দেওয়া। সেরেনা হোটেল শুধুমাত্র একটি বিলাসবহুল হোটেলই নয়, এটি ছিল আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রস্থল। সুতরাং, এই পদক্ষেপটি তালিবানের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এক নতুন কৌশল হিসেবে দেখা যেতে পারে, যেখানে তারা আফগানিস্তানের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নিজেদের দৃঢ় অবস্থান ঘোষণা করছে।
তবে, সেরেনা হোটেল এখন কিভাবে চলবে এবং তার ভবিষ্যত কেমন হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। স্থানীয়রা এবং আন্তর্জাতিক পর্যটকরা এই হোটেলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আফগানিস্তানে চলমান রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি যা কিছু, সেরেনা হোটেলের দখল তাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
এই ঘটনায় একটি প্রশ্নও উঠে আসে—কেন এমন সময় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? তালিবান সরকারের এই পদক্ষেপের পেছনে কেবল নিরাপত্তা উদ্বেগই নয়, এটি আরও বড় কোনো রাজনৈতিক বা কৌশলগত পরিবর্তনের লক্ষণ হতে পারে।
গোটা রান্না: সরস্বতী পুজোয় পূর্ব বাংলার ঐতিহ্য, চচ্চড়ির স্বাদে নতুনত্ব