কা(ন শুনতে দিতে পারে ভায়াগ্রা?
ভায়াগ্রা—সিলডেনাফিল—দীর্ঘদিন ধরেই পুরুষের যৌনউত্তেজনা বাড়ানোর ওষুধ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এখন সেই ওষুধই যে এক ধরনের বধিরতার চিকিৎসায় কাজে লাগতে পারে, তেমনই এক উত্তেজনাপূর্ণ খবর প্রকাশিত হয়েছে সাম্প্রতিক গবেষণায়। যদিও এখন পর্যায়ে আছে, তবু এই আবিষ্কার যদি সফলভাবে মানুষের ওপর প্রয়োগ করা যায়, তা হলে জন্মগত কিছু বধিরতার সমস্যাই বদলে যেতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী।
বিশ্বব্যাপী প্রায় প্রত্যেক ২,০০০ জনের মধ্যে একজন জন্মগত শ্রবণক্ষতির সঙ্গে জন্মান—এমনই পরিসংখ্যান। সাধারণত এই জন্মগত বধিরতার সমাধান কঠিন; অনেক ক্ষেত্রেই শোনার ক্ষমতা জীবনভর শূন্য থাকে। কিন্তু সম্প্রতি কাগজেরাায় প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে—কানের ভিতরের একটি নির্দিষ্ট জিনের পরিবর্তন (মিউটেশন) নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শ্রবণশক্তি নষ্ট করে; এবং সেই পথটিকে টার্গেট করলে সমস্যা প্রতিরোধ বা আংশিক সরানো সম্ভব।
গবেষক দলটি জিন সিকোয়েন্সিং করে শনাক্ত করেছেন—শ্রবণহানির সঙ্গে যুক্ত এক উৎসেচক জিন, যার নাম CARBOXYPEPTIDASE D (CPD)। তিনটি বিরল মিউটেশনে CPD-র কার্যকারিতা বাধাগ্রস্থ হয়ে যায়। এর ফলে কানের কোকলিয়া অংশে (অর্থাৎ সূক্ষ্ম সংবেদনশীল কোষের এলাকায়) আর্জিনিন উৎপাদন কমে যায়। আর্জিনিন না থাকলে নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি কমে—এটি স্নায়ুতন্ত্রে সংকেত পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ন। নাইট্রিক অক্সাইডের অভাবে কানের ইনসাইট কোষে অসামান্য চাপ বেড়ে যায়, কোষের ক্ষয় শুরু হয় এবং শোনা রুদ্ধ হয়ে পড়ে।
গবেষকরা প্রাথমিক পরীক্ষায় ইঁদুর এবং মশার মডেলে দেখিয়েছেন: CPD কার্যহীন হলে চুলের কোষে আর্জিনিন স্তর কমে যায় এবং অ্যাকসিডেন্টাল শ্রবণক্ষতি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু যখন কানের মৃত কোষগুলিতে আর্জিনিন বা নাইট্রিক অক্সাইড বাড়ানো হয়—চালে উন্নতি টের পাওয়া যায়। আর সিলডেনাফিল (ভায়াগ্রা) সরবরাহের মাধ্যমে নাইট্রিক অক্সাইড বৃদ্ধির পথ সক্রিয় করা যায়—এমনটি পরীক্ষায় দেখা গেছে। এর ফলে কিছুকালীন উন্নতি বা ক্ষতির প্রক্রিয়া ধীর হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী রং গ্রেস জ়াইয়ের কথায়, “এই আবিষ্কারটা চমকপ্রদ—কারণ আমরা খুঁজে পেয়েছি এমন একটি জিন-রুটিন যা জন্মগত শ্রবণক্ষতির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত এবং সেটিকে লক্ষ্য করে আমরা কার্যকর সমাধানের পথ চিন্তা করতে পারি।” তবে তিনি সতর্ক করেছেন, মানুষের ওপর ফলাফল পেতে এখনও বহু ধাপ পেরোতে হবে—জিন থেরাপি, ওষুধের ডোজ নির্ধারণ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি যাচাই করা জরুরি।
গবেষকরা জোর দিয়ে বলছেন—এটি কোনো মুহূর্তের “চিকিৎসা-চার্ম” নয়। ভায়াগ্রার সহায়তায় যে প্রক্রিয়া কাজ করতে পারে তা মূলত নাইট্রিক অক্সাইড-নিয়ন্ত্রিত সংকেতপথ বাড়ানো—অর্থাৎ রোগের প্রক্রিয়া ধীর বা আংশিক প্রতিহত করা সম্ভব, কিন্তু স্থায়ী পুনরুদ্ধার নিশ্চিত নয়। তাছাড়া সব ধরনের জন্মগত বধিরতা এই পথ দিয়ে যাবে না; শুধুমাত্র CPD-ধরনের নির্দিষ্ট মিউটেশনে এর সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানে বিশ্বের কয়েকটি কেন্দ্রে চলছে আরও ব্যাপক গবেষণা ও পরীক্ষামূলক চিকিৎসা (প্রক্লিনিক্যাল ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়)। জিন থেরাপি এবং সিলডেনাফিল-ভিত্তিক চিকিৎসার মিশেলে আগামী কয়েক বছরে নতুন চিকিৎসা পথ উন্মোচিত হতে পারে—তবে এর আগে নিরাপত্তা, কার্যকারিতা ও নীতিগত দিকগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করতে হবে।
সংক্ষেপে—ভায়াগ্রা শুধুই যৌনউত্তেজক নয়; নির্দিষ্ট জিনগত আবর্তে এটি কানের ক্ষতি রোধে নতুন সম্ভাবনা খুলছে। কিন্তু এটি এখনো এক “প্রাথমিক হদিশ”—প্লাটফর্ম তৈরির কাজ চলছে, আর মানবিক আশায়ই নয়, বিজ্ঞানের কড়া পরীক্ষায়ই আসল সিদ্ধান্ত নিনোর হবে।

