কানাডার নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের!
কানাডার আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও বিদেশি হস্তক্ষেপের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সে দেশের গুপ্তচর সংস্থা কানাডিয়ান সিকিয়োরিটি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (CSIS)। সংস্থার দাবি, ভারত, চিন, রাশিয়া এবং পাকিস্তান— এই চার দেশ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে।
বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ কেন?
আগামী ২৮ এপ্রিল কানাডায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগেই CSIS জানিয়েছে, বিভিন্ন রাষ্ট্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে চিন এবং ভারতের দিকে সন্দেহের আঙুল তুলেছে সংস্থাটি।
CSIS-এর ডেপুটি ডিরেক্টর ভেনেসা লয়েড বলেছেন, “বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর কৃত্রিম মেধা ব্যবহার করার ক্ষমতা এবং অভিপ্রায় রয়েছে, যা কানাডার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ ঘটাতে পারে। ভারতও এই সন্দেহের তালিকায় রয়েছে।”
ভারত-কানাডা সম্পর্কে তিক্ততা
ভারত এবং কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমশ জটিল হয়েছে। বিশেষ করে খলিস্তানপন্থী কার্যকলাপ নিয়ে কানাডায় ভারতের উদ্বেগ প্রকাশের ঘটনা বারবার সামনে এসেছে।
খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডের পর কানাডা ভারতের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছিল, যা নয়াদিল্লি দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, “এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
অতীতের অভিযোগ এবং প্রতিক্রিয়া
এর আগেও কানাডার নির্বাচনে ভারতের হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছিল। তবে সেসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ভারত বরাবরই এই অভিযোগগুলিকে “সম্পূর্ণ মিথ্যা” এবং “কানাডার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অংশ” বলে দাবি করেছে।
অন্যদিকে, ভারতের অভিযোগ, কানাডা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে এবং খলিস্তানপন্থীদের মদত দিচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নে এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কূটনৈতিক অবস্থানও এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। কানাডার বিরোধী দলগুলো ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং সরকারের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ চেয়েছে।
রাশিয়া ও পাকিস্তানও সন্দেহের তালিকায়
শুধু ভারত ও চিনই নয়, রাশিয়া এবং পাকিস্তানকেও কানাডার নির্বাচনে হস্তক্ষেপের সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে দেখছে CSIS।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার হামলা, ভুয়া তথ্য প্রচার এবং বিভ্রান্তিকর প্রচারণা— এ সবই বিদেশি হস্তক্ষেপের সাধারণ কৌশল। কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা ইতোমধ্যে এসব বিষয়ে নজরদারি শুরু করেছে।
কী হবে পরবর্তী পদক্ষেপ?
২১ এপ্রিল কানাডার গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে। দেশের সাইবার সিকিউরিটি ব্যবস্থা এবং নির্বাচনী নিরাপত্তা জোরদার করতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই অভিযোগ কতটা সত্য, তা এখন সময়ই বলবে। তবে ভারতের বিরুদ্ধে কানাডার এ ধরনের অভিযোগ দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে আরও উত্তেজনা বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।