Saturday, February 8, 2025

কানাডার উপর আপাতত শুল্ক বসাচ্ছেন না ট্রাম্প! ট্রুডোর কূটনৈতিক চালেই কি বদলে গেল সিদ্ধান্ত?

Share

কানাডার উপর আপাতত শুল্ক বসাচ্ছেন না ট্রাম্প!

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কড়াকড়ির মাঝে স্বস্তি পেল কানাডা। কানাডার পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে হোয়াইট হাউস। মঙ্গলবার থেকেই এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, তবে শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প তা ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন। ঠিক একইভাবে, মেক্সিকোর উপরও শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত সাময়িকভাবে পেছানো হয়েছে।

ট্রাম্প-ট্রুডোর দ্বিপাক্ষিক আলোচনা

ট্রাম্পের এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত বদলের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। সোমবার রাতে দুই দফায় ট্রাম্প ও ট্রুডোর মধ্যে আলোচনা হয়। সেই আলোচনার পরেই ট্রাম্প শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।

প্রসঙ্গত, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে। একইসঙ্গে, চিন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক ধার্য করার কথাও ঘোষণা করেছিলেন ট্রাম্প। তবে শেষ মুহূর্তে কানাডা ও মেক্সিকোর জন্য সিদ্ধান্ত বদলালেও, চিনের জন্য এই শুল্ক নীতি বহাল থাকছে।

কানাডার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অভিযোগ

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, কানাডা হয়ে বিপজ্জনক মাদক ফেন্টানাইল আমেরিকায় প্রবেশ করছে। ফেন্টানাইল এক ধরনের শক্তিশালী ব্যথানাশক, যা অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহারের ফলে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। ট্রাম্পের দাবি, কানাডা এই মাদক পাচার রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যদিও ট্রুডো এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন। তাঁর মতে, আমেরিকায় যে পরিমাণ ফেন্টানাইল প্রবেশ করে, তার মাত্র এক শতাংশই কানাডা থেকে যায়।

শুল্ক স্থগিতের মূল কারণ কী?

সোমবারের আলোচনায় ট্রুডো আশ্বাস দেন, ফেন্টানাইল পাচার রোধে কানাডা কঠোর ব্যবস্থা নেবে। সীমান্ত নজরদারি আরও জোরদার করতে কানাডা ১৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। নতুন প্রযুক্তি, উন্নত নজরদারি ব্যবস্থা ও আধুনিক হেলিকপ্টারের সংযোজনের মাধ্যমে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।

এছাড়াও, কানাডার পক্ষ থেকে আরও ১০ হাজার নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যা ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি পূরণে সহায়ক হবে।

যৌথ পদক্ষেপ: ‘জয়েন্ট স্ট্রাইক ফোর্স’ গঠন

ট্রুডোর উদ্যোগে কানাডা ও আমেরিকার মধ্যে একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার নাম ‘জয়েন্ট স্ট্রাইক ফোর্স’। এর উদ্দেশ্য হলো—
ফেন্টানাইল পাচার রোধ করা
আর্থিক তছরুপ ঠেকানো
সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করা

এই যৌথ উদ্যোগের অংশ হিসেবে আমেরিকাও ২০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। ট্রাম্প নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন, “এতে সবার জন্যই ভালো হল।”

রাজনৈতিক কৌশল নাকি বাস্তব সমঝোতা?

কানাডার পণ্যের উপর শুল্ক আরোপ করলে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়ত। কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার, এবং মার্কিন অর্থনীতির সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। তাই এই শুল্ক স্থগিত করার সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র ট্রুডোর কূটনৈতিক চাল নয়, বরং বাস্তব পরিস্থিতির মূল্যায়নও বটে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চাইছেন। কঠোর অভিবাসন নীতির পাশাপাশি তিনি আমেরিকান শিল্প ও বাণিজ্যকে সহায়তা দিতে চান, কিন্তু একইসঙ্গে মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কও বজায় রাখতে বাধ্য হচ্ছেন।

এখন কী হতে পারে?

✅ আগামী ৩০ দিন এই শুল্ক স্থগিত থাকবে, তবে পরবর্তী আলোচনা কীভাবে এগোয়, তার উপর নির্ভর করবে ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত।
✅ ট্রুডো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা কার্যকর হলে হয়তো কানাডা স্থায়ীভাবে শুল্কের হাত থেকে রেহাই পাবে।
✅ ট্রাম্প প্রশাসন এই সুযোগ নিয়ে মেক্সিকো ও কানাডার উপর আরও কঠোর নজরদারি বাড়াতে পারে।

শেষ কথা

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে বরাবরই বিতর্ক রয়েছে। তবে ট্রুডোর কৌশলী কূটনীতি আপাতত কানাডাকে স্বস্তি দিয়েছে। আগামী দিনে কানাডা ও আমেরিকার সম্পর্কের গতিপথ কোন দিকে যায়, তা নির্ভর করবে ট্রুডোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের উপর। তবে একথা বলা যেতেই পারে, দুই দেশের মধ্যে আলোচনার পথ এখনও খোলা রয়েছে, এবং শুল্ক যুদ্ধে জয়ী হতে হলে কেবল চাপ নয়, বরং কূটনৈতিক বুদ্ধিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শাড়ি-পাঞ্জাবিতে অঞ্জলি, দুরুদুরু বুকে প্রেমপ্রস্তাব, বসন্ত-বিলাস, আফসোস আর সরস্বতী বন্দনা

Read more

Local News