কল্যাণীর সবুজ পাতায় পেস ঝড়!!
কল্যাণীর সবুজাভ উইকেটে রঞ্জি ট্রফির লড়াইয়ের প্রথম দিনেই দাপট দেখাল বাংলার পেস-বাহিনী। রেলওয়েজ ম্যাচে বিশ্রামের পর রবিবার অসমের বিরুদ্ধে দলে ফিরে জ্বলে উঠলেন মহম্মদ শামি। সঙ্গে মহম্মদ কাইফ, সূরজ সিন্ধু জয়সওয়াল এবং ঈশান পোড়েল— চার পেসার মিলে প্রথম দিনেই তুলে নিলেন প্রতিপক্ষের আটটি উইকেট। দিনের শেষে অসমের স্কোর দাঁড়াল ১৯৪/৮, আর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে গেল বাংলার হাতে।
টসে জিতে পেস-অস্ত্রে ভরসা
বাংলার অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরণ টসে জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেন। কল্যাণীর মাঠে আগে থেকেই কিছুটা ঘাস দেখা যাচ্ছিল, তাই দল নির্বাচনে চার পেসার খেলানোর কৌশল নেন কোচিং স্টাফ। শামি ও অভিমন্যুর সঙ্গে সেই তালিকায় ছিলেন কাইফ, সূরজ ও পোড়েল। প্রথম থেকেই দেখা যায়, সিদ্ধান্ত ভুল হয়নি।
সূরজের প্রথম ধাক্কা
মাত্র ২ রানেই প্রথম আঘাত হানে বাংলা। সূরজ সিন্ধু জয়সওয়াল ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার ঋষভ দাসকে ফিরিয়ে দেন। এর পরে প্রদ্যুন শইকীয়া ও সরুপম পুরকায়স্থ মিলে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের ৫৩ রানের জুটিতেই খানিক চাপ তৈরি হয়েছিল বাংলার উপর।
কাইফ ভাঙলেন জুটি, চাপে প্রতিপক্ষ
জুটি ভাঙার কাজটি করেন শামির ভাই মহম্মদ কাইফ। ৩৮ রান করে ফিরলেন প্রদ্যুন। দ্বিতীয় উইকেট পড়তেই ধীরে ধীরে ম্যাচের ছন্দ বাংলার দিকে ঘুরে যেতে শুরু করে।
শামির আগুনে স্পেল— সরুপমকে ফিরিয়ে বড় ধাক্কা
নতুন বলে উইকেট না পেলেও বল পুরনো হতেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন শামি। অসমের সবচেয়ে দৃঢ় ব্যাটার সরুপম পুরকায়স্থ যখন অর্ধশতরান ছুঁয়ে আরও সেট হচ্ছিলেন, তখনই তাঁকে বোল্ড করেন শামি। ৬২ রানে ফিরে যান সরুপম। এই উইকেটের পর থেকেই নিয়মিত ব্যবধানে ভাঙতে থাকে অসমের ব্যাটিং।
অসমের ব্যাটিং ভরাডুবি ও অধিনায়কের লড়াই
অসমের অধিনায়ক সুমিত ঘাদিগাঁওকর এক প্রান্তে লড়াই চালিয়ে গেলেও সঙ্গী পাননি কেউই। দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটার রিয়ান পরাগ অনুপস্থিত থাকায় আরও সমস্যায় পড়ে অসম। সুমিত ৪৮ রানে অপরাজিত থাকলেও অন্য পাশ থেকে উইকেট পড়তেই থাকে। আকাশ সেনগুপ্তকে ফিরিয়ে শামি নেন দিনের দ্বিতীয় সাফল্য।
বাংলার পেসারদের সার্বিক দাপট
দিনের শেষে অসম ৮ উইকেটে ১৯৪। পুরো আটটি উইকেটই এসেছে বাংলার পেস বোলারদের হাত ধরে— যা স্পষ্ট করে দেয় উইকেটটি পেসারদের কতটা সাহায্য করেছে এবং বাংলার চার পেসারের নিখুঁত লাইন-লেন্থ।
বাংলার বোলারদের প্রথম দিনের পরিসংখ্যান—
- মহম্মদ শামি: ২২ ওভার, ৬২ রান, ২ উইকেট
- সূরজ সিন্ধু জয়সওয়াল: ১৮ ওভার, ২০ রান, ৩ উইকেট
- মহম্মদ কাইফ: ১১ ওভার, ৩০ রান, ২ উইকেট
- ঈশান পোড়েল: ১৪ ওভার, ৩৯ রান, ১ উইকেট
এই পারফরম্যান্সে স্পষ্ট, বাংলার চার পেসার সম্মিলিত ভাবে অসমকে চাপে ফেলে দিয়েছে। দ্বিতীয় দিন শুরু হলে দ্রুত বাকি দুই উইকেট তুলে নিয়ে ব্যাট হাতে দাপট দেখানোর লক্ষ্যই থাকবে বাংলার।
কল্যাণীর ফুরফুরে আবহে বাংলার দলের এই জোরালো শুরু তাদের লড়াইয়ে এগিয়ে রেখেছে— এখন দেখার, ব্যাটাররা এই পেস ঝড়ের উপর ভর করে বড় লিড গড়ে তুলতে পারেন কি না।

