Friday, February 7, 2025

কলকাতা শহরে বেআইনি নির্মাণে পুরসভার ব্যর্থতা: একের পর এক বাধা

Share

কলকাতা শহরে বেআইনি নির্মাণে পুরসভার ব্যর্থতা

কলকাতা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বেআইনি নির্মাণ রোধে পুরসভার উদ্যোগ একের পর এক ব্যর্থতার মুখে পড়ছে। গত ২৮ জুন থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেআইনি নির্মাণের মোট ৫২৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে কলকাতা পুরসভায়। তবে, তার মধ্যে মাত্র ২৬৪টি বাড়ি ভাঙা হয়েছে, যা বাস্তবতার নিরিখে একেবারেই অপ্রতুল। এই তথ্য কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ থেকে প্রকাশিত হয়েছে, যা দেখিয়ে দিচ্ছে, বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে পুরসভার দুর্বলতা এবং বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা।

বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ প্রতিদিনই বাড়ছে, কিন্তু তার প্রায় অর্ধেকও ভাঙা সম্ভব হচ্ছে না। ৫২৫টি অভিযোগের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে পুরসভার কর্মীরা বিভিন্ন বাধার মুখে পড়েছেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা নজর কেড়েছে। গত ৩ ডিসেম্বর, ১০৫ নম্বর ওয়ার্ডের গরফার ঘোষপাড়ায় একটি বেআইনি চারতলা বাড়ি ভাঙতে গেলে স্থানীয় মহিলাদের বাধার মুখে পড়েন পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা। তারা কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাড়ি ভাঙতে পারেননি, এবং কিছু অংশ ভেঙে ফিরে যেতে হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, ওই বাড়িটি ভাঙতে গিয়ে এটি পাঁচবারের মতো বাধার সম্মুখীন হয়েছে।

এমনকি একাধিক ক্ষেত্রে, খোদ এলাকার পুরপ্রতিনিধিরা বা স্থানীয় জনগণও বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে পুরসভার কর্মীদের বাধা দিয়েছেন। বিশেষ করে মহিলাদের একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ জানানো এবং পুলিশকর্মীর সংখ্যা পর্যাপ্ত না থাকায়, পুরসভার কর্মীরা পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছেন। ১৫, ৩, ৭, ১২ নম্বর বরোয় বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এসব স্থানে, ভাঙার কাজের মধ্যে যথেষ্ট অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। ১৫ নম্বর বরোতে ১২৭টি অভিযোগ জমা পড়লেও, তার মধ্যে মাত্র ২৭টি বাড়ি ভাঙা হয়েছে।

গত কয়েক মাসে বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে পুরসভার কর্মীরা অনেক ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। এক মহিলা ইঞ্জিনিয়ারের ওপর চারু মার্কেট থানা এলাকায় লোকজন বিক্ষোভ দেখানোর পর, বন্দুক দিয়ে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে। আবার, বেহালার একটি বেআইনি বাড়ি ভাঙতে যাওয়ার সময় পুরকর্মীদের আটকে রাখা হয় এবং বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুরসভার কর্মীরা নানা ধরনের ভয় এবং বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন।

গার্ডেনরিচে বেআইনি নির্মাণের জন্য ১৩ জনের মৃত্যুর পর, পুরসভার শীর্ষ কর্তৃপক্ষ বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু, বাস্তবে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হতে দেখা যাচ্ছে না। সম্প্রতি, পুরসভার তরফ থেকে বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে ‘এসওপি’ (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) তৈরি করা হয়েছে। তবুও, সারা শহরেই বেআইনি নির্মাণের হোয়াইট স্পট বেড়েই চলছে।

বিজেপি’র পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষ অভিযোগ করেন, “৫২৫টি বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ জমা পড়েছে, তবে মাত্র ২৬৪টি ভাঙা হয়েছে। এই তথ্যই দেখিয়ে দেয়, পুরসভা কী কাজ করছে!” তাঁর মতে, পুরসভা যথেষ্ট উদ্যোগী হলে এমন হতাশাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না।

যদিও পুরসভার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, বেআইনি নির্মাণের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে, বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। জনবিস্তারিত এলাকায় বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে পুরসভার ব্যর্থতা দিনের পর দিন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ভবিষ্যতে এই সমস্যা সমাধানে আরো কার্যকর এবং দৃঢ় পদক্ষেপের প্রয়োজন, যাতে শহরের নিরাপত্তা এবং পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।

Read more

Local News