কলকাতা মেডিক্যালে চিকিৎসক-ছাত্রীর প্রতীকী মূর্তি ভাঙা
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ও ছাত্রীকে ঘিরে এক নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে লাগাতার চলছে আন্দোলন। সেই প্রতিবাদের অংশ হিসেবে হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসক-ছাত্রীর প্রতীকী মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল, যা রবিবার সকালে ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরেই হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে, উঠতে শুরু করে নানা প্রশ্ন।
ঘটনার সূত্রপাত হয় আর জি কর হাসপাতালে ঘটে যাওয়া এক ভয়াবহ ঘটনার পর থেকে। সেখানে চিকিৎসক-ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে সরব হয়েছিল মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার ও শিক্ষার্থীরা। সেই ঘটনার পর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে নিহত চিকিৎসক ও ছাত্রীর প্রতীকী মূর্তি স্থাপন করা হয়। মূর্তিটি গত তিন মাস ধরে সেখানে অটুটভাবে স্থাপিত ছিল, যা প্রতীকী হিসেবে সকলকে সেই মর্মান্তিক ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিত।
শনিবার এই আন্দোলন আরও প্রসার লাভ করে। হাসপাতাল চত্বরে ‘দ্রোহের গ্যালারি’ নামে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়, যেখানে চিকিৎসক-ছাত্রীদের উপর সংঘটিত সহিংসতার নানা ছবি ও প্রতীকী প্রদর্শনী ছিল। একই দিনে কলেজ স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত প্রতিবাদী মিছিলও আয়োজিত হয়, যার শেষে আরও একটি প্রতীকী মূর্তি হাসপাতালের চত্বরে স্থাপন করা হয়। তবে রবিবার সকালে হাসপাতালে আসার পর জুনিয়র ডাক্তাররা দেখেন, সেই মূর্তিগুলির মধ্যে দুটি উল্টে পড়ে আছে, এবং সেগুলির হাত ও মুখ ভাঙা অবস্থায় রয়েছে।
এই ঘটনার পর হাসপাতালের জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। কারা এমন নিন্দনীয় কাজ করলো এবং কী উদ্দেশ্য নিয়ে তারা এই প্রতীকী মূর্তিগুলিকে ভাঙল, এই প্রশ্নে মুখরিত জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, এই মূর্তি ভাঙা শুধুমাত্র তাদের প্রতিবাদ দমনের চেষ্টা বলে মনে হচ্ছে। ‘দ্রোহের গ্যালারি’তে কোনও ক্ষতি না করায় এটি যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিশেষ কোনো বার্তা দেওয়ার জন্যই করা হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ করছেন তাঁরা। যদিও রাত পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়নি, তবুও এর সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা জোর দাবি জানিয়েছে।
এই প্রথম নয়, এর আগেও বারংবার প্রতিবাদী আন্দোলনের উপর আঘাত এসেছে। আর জি কর হাসপাতালের ঘটনার পর বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসক ও ছাত্রীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি শেক্সপিয়র সরণি থানা এলাকার একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে ফেরার পথে কিছু চিকিৎসক এবং শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়েছিলেন। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়েও চিকিৎসক-ছাত্রীর প্রতীকী মূর্তি অজ্ঞাতভাবে উধাও হয়ে যায়। আর এই তালিকায় এবার যুক্ত হলো কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সাম্প্রতিক ঘটনাও।
এই ঘটনাগুলি প্রমাণ করে, প্রতিবাদী আন্দোলনকে দমন করার জন্য নানা কৌশলে ভয় দেখানো হচ্ছে। মেডিক্যাল শিক্ষার্থী ও জুনিয়র ডাক্তারদের মতে, এই ধরনের আক্রমণ তাদের মতপ্রকাশের অধিকারকে খর্ব করছে এবং তাদের মনে গভীর আতঙ্কের সৃষ্টি করছে। হাসপাতালের চত্বরে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা চলছে এবং বিভিন্ন মহল থেকে নিন্দার ঝড় উঠেছে।
হাসপাতাল চত্বরে এতটা দুঃসাহসিক আচরণ কীভাবে সম্ভব হলো, সেই প্রশ্নে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বিস্মিত। কারা এমন কাজের জন্য দায়ী, এবং তাদের উদ্দেশ্য কি, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তবে একাধিক জায়গায় বারংবার প্রতিবাদের উপর এই ধরনের আক্রমণকে চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা ভয় দেখানোর কৌশল বলেই মনে করছেন।
এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে জুনিয়র ডক্টরদের সংগঠন। তাদের দাবি, অতি দ্রুত এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আন্দোলনকারীদের উপর লাগাতার আক্রমণের এই প্রবণতা যদি বন্ধ না হয়, তবে প্রতিবাদ আরও তীব্রতর হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
তারা বলেন, “এই প্রতীকী মূর্তি আমাদের প্রতিবাদের প্রতীক। এর উপর আঘাত মানে আমাদের আন্দোলন ও আবেগের উপর আঘাত। আমরা একে সহ্য করব না এবং অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করতে হবে।”