Friday, February 7, 2025

কলকাতা মেট্রোতে প্রকাশ্যে চুমু বিতর্ক: ‘আইনে অপরাধ?’ ‘ভালোবাসা দেখালে ক্ষতি কি?’

Share

কলকাতা মেট্রোতে প্রকাশ্যে চুমু বিতর্ক

সম্প্রতি কলকাতা মেট্রো স্টেশনে এক যুগলের প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে, এবং এটি নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। কালীঘাট মেট্রো স্টেশনে পিলারের পাশে দাঁড়িয়ে এক যুগল একে অপরকে চুমু খাচ্ছিল, যা দেখতে পেয়ে রীতিমতো আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। বিষয়টি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্তাল হয়ে উঠেছে। এক পক্ষের দাবি, প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া ঠিক নয়, তা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। অন্য পক্ষের মতে, ভালোবাসা প্রকাশে বাধা দেওয়ার কোনো কারণ নেই।

প্রসঙ্গত, কলকাতা মেট্রোর একটি বিজ্ঞপ্তি ছিল যা কোভিড-১৯-এর সময় প্রচারিত হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, স্টেশন বা ট্রেনে আলিঙ্গন বা চুমু খাওয়া, হ্যান্ডশেক করা নিষেধ ছিল। তবে সেই সময়কাল এখন অতীত, এবং কোভিডের বিধি-নিষেধও উঠে গেছে। বর্তমানে মেট্রো স্টেশনগুলোতে দূরত্বের বিধি বা মাস্ক পরার বিষয়টিও অনেকটাই শিথিল হয়ে গেছে। তবুও এই প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

এই ভাইরাল ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। কিছু নেটিজেন প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘মেট্রো স্টেশনে চুমু খাওয়াতে এমন কী সমস্যা? যদি রাস্তাঘাটে কেউ মারপিট করে, সেটা থামাতে যাওয়া হয় না, তবে ভালোবাসা দেখানোতে ক্ষতি কোথায়?’’ অন্য একজন আবার লিখেছেন, ‘‘এরা রাস্তাঘাটে যা করছে, সেটা দেখে পুলিশ যদি ৫০ ঘা লাঠির বাড়ি দিয়ে দেয়, তাতে কিছু ভুল ছিল না।’’ যদিও এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে একজন বলেছেন, ‘‘এখানে তো নগ্নতা বা অসভ্যতা কিছু দেখছি না। কাউকে ভালোবাসা প্রকাশ করা কি অপরাধ?’’

এমন পরিস্থিতিতে, অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “বেশ করেছে চুমু খেয়েছে, ঘুষ খায়নি তো আপনাদের মতো! Get a life man।” তার মন্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি প্রকাশ্যে ভালোবাসা প্রকাশে কোনও আপত্তি দেখেন না।

অন্যদিকে, বিজেপি নেতা এবং আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি লিখেছেন, “মেট্রো স্টেশনে এক যুগল একে অপরকে চুমু খেয়েছে, এতে আপত্তি করার কারণ কী? আপনারা কি কখনও কাউকে ভালোবেসে চুমু খেতে চাননি? প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া যে ভারতের আইনে অপরাধ, তা তো জানা নেই। তাছাড়া, চুমু খাওয়াকে কখনোই অশ্লীল কাজ হিসেবে গণ্য করা যায় না। চুমু বা আলিঙ্গন ভালোবাসা প্রকাশের এক স্বাভাবিক এবং আইনসিদ্ধ মাধ্যম, যা মানুষের অনুভূতি এবং স্নেহ দেখানোর স্বাধীনতাকে প্রকাশ করে।”

এছাড়া, অনেক নেটিজেন এই তুলনা করেছেন বিদেশের বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে। একজন লিখেছেন, “কনসেন্ট নিয়ে চুমুটা প্যারিসে আইফেল টাওয়ারের সামনে হলে ‘কি রোমান্টিক!’, মায়ামির বিচে ‘me and who?’, আর কলকাতা মেট্রোয় নিজের শহরে চুমু খেলে ‘এ মা, এসব কি করছে দেখো?’” তার এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি প্রকাশ্যে ভালোবাসা প্রকাশের প্রতি দ্বৈত মানদণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

মেট্রো স্টেশনে এমন ঘটনা ঘটার পর, সাধারণ মানুষের মধ্যে মতবিরোধ শুরু হলেও, একথা স্পষ্ট যে, চুমু খাওয়ার মতো সাধারণ মানবিক অভিব্যক্তি কতটা স্বাভাবিক, তা নিয়ে ভারতীয় সমাজে এখনও বিভাজন রয়েছে। কিছু মানুষ মনে করেন, এটি অশ্লীলতা এবং দৃষ্টিদূষণ, আবার অন্যরা মনে করেন, এটি একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় এবং ভালোবাসা প্রকাশের স্বাধীনতা।

চলচ্চিত্র, সঙ্গীত বা সাহিত্যের মতো শিল্প ক্ষেত্রেও প্রকাশ্য ভালোবাসা বা অনুভূতি দেখানোর বিষয়টি অনেকবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তবে, বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে, যেখানে প্রতিটি ঘটনা মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, সেখানে এমন ধরনের বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এটি দেখে মনে হচ্ছে, সমাজের মধ্যে ভালোবাসা প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আরো বৃহত্তর আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

Read more

Local News