মোহনবাগানের দুর্দান্ত জয়ে ইস্টবেঙ্গলের হতাশা!
কলকাতা ডার্বিতে আবারও জয়ের হাসি মোহনবাগানের। যুবভারতীতে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলকে ২-০ ব্যবধানে পরাজিত করে তারা আইএসএলের পয়েন্ট তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। এর ফলে ইস্টবেঙ্গল নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে পড়ে গেছে, যেখানে তারা পাঁচ ম্যাচের সবকটিতে হারিয়েছে এবং শেষ স্থান দখল করে রয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যা ৭.৩০টায় শুরু হওয়া এই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মোহনবাগানের জয়টা ছিল প্রত্যাশিত। সমর্থকদের আবেগ ও উদ্দীপনা নিয়ে ম্যাচের আগে অনেকেই নিজেদের পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন। এক ইস্টবেঙ্গল সমর্থক বলেছিলেন, “ডার্বির জন্য আমি সারা দিন কিছুই করব না।” কিন্তু যুবভারতীতে আসার পর তাঁকে আশাহত হয়ে ফিরতে হলো।
ম্যাচের শুরুতে মোহনবাগানকে আক্রমণের ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যেতে দেখা যায়। জেমি ম্যাকলারেন এবং দিমিত্রি পেত্রাতোসের জুটি নিজেদের কৌশল ও গতি দিয়ে ইস্টবেঙ্গলকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। প্রথমার্ধে একটি গোলের সুযোগ সৃষ্টি হলেও লাইন্সম্যান অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর ম্যাকলারেন ৪১ মিনিটে গোল করে মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন।
ইস্টবেঙ্গল দলের দুর্বলতা বিশেষ করে তাদের সাইডব্যাকদের অযোগ্যতায় স্পষ্ট ছিল। মহম্মদ রাকিপ ও প্রভাত লাকরা ম্যাচের দুই প্রান্তে যথেষ্ট দুর্বল ছিলেন। লাকরার অবস্থা ছিল আরও খারাপ, কারণ তাঁর প্রান্ত দিয়ে গোল হজম করেছিল মোহনবাগান। এদিকে, রাকিপও নিজেদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে ব্যর্থ হন।
মোহনবাগান ম্যাচের মাঝের সময়গুলোতে ইস্টবেঙ্গলকে বল নিয়ন্ত্রণ করতে দেননি। নতুন কোচ অস্কার ব্রুজ়ো চান তাঁর দল পায়ে বল রেখে খেলুক, কিন্তু এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা সেই সুযোগ পায়নি। তারা বল পেতে গেলে মোহনবাগানের খেলোয়াড়রা দ্রুত ছুটে এসে বল কেড়ে নিতে ব্যস্ত ছিলেন। ফলে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা নিজেদের খেলায় পরিণত হতে পারেনি।
ম্যাচের প্রথম গোলের পর মোহনবাগান আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। তারা আক্রমণের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ইস্টবেঙ্গলকে চাপে রাখে। এর পরের গোলটি আসে ৮০ মিনিটে, যখন পেত্রাতোস পেনাল্টি মিস করেননি। প্রভসুখন গিল তাকে ফাউল করার পর পেত্রাতোস পেনাল্টি শটটি মিস করেননি এবং তাকে গোল করে দেন।
ম্যাচ শেষে মোহনবাগান গ্যালারিতে সমর্থকদের সঙ্গে উদযাপন করে। অপরদিকে, ইস্টবেঙ্গলের কোচ অস্কার ব্রুজ়ো ও সহকারী বিনো জর্জের মধ্যে গম্ভীর আলোচনা চলছিল। তাঁদের মধ্যে কী পরিকল্পনা হচ্ছে, তা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ইস্টবেঙ্গলকে নতুন করে সাজাতে হলে অনেক পরিবর্তন আনতে হবে।
ম্যাচের সমাপ্তি ইস্টবেঙ্গলের জন্য হতাশার ছিল। তারা ধারাবাহিকভাবে হারতে হারতে নিজেদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলটির মানসিকতা ও খেলার স্টাইলের পরিবর্তন একান্ত জরুরি।
এদিকে, ম্যাচে মোহনবাগানের গোলরক্ষক প্রভসুখন গিল নিজেকে নায়ক এবং খলনায়ক উভয় ভূমিকাতেই প্রমাণ করেছেন। প্রথমার্ধে তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গোল বাঁচিয়েছেন, কিন্তু প্রথম গোলটি খেয়ে দলের আত্মবিশ্বাসে আঘাত দিয়েছেন।
এই ডার্বিতে অন্যতম সেরা পারফরম্যান্সের স্বাক্ষর রেখেছেন মাদিহ তালাল। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ফর্মে ফেরার পর তিনি মোহনবাগানের বিরুদ্ধে দলের আক্রমণের স্রোতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
ডার্বির সমার্থক হয়ে উঠেছেন দিমিত্রি পেত্রাতোস। ডার্বিতে গোল করার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাওয়া পেত্রাতোস ম্যাচের শেষের দিকে পেনাল্টি আদায় করেন।
মোটের উপর, কলকাতা ডার্বিতে মোহনবাগানের জয় ইস্টবেঙ্গলের জন্য আরও একবার হতাশার চিত্র তুলে ধরেছে। এখন তাঁদের সামনে আরও কঠিন পথ রয়েছে।