Monday, December 1, 2025

কলকাতার ভৌতিক রাত: ‘ভূতপূর্ব’ তারকারা যখন ভূতের খোঁজে পথে

Share

‘ভূতপূর্ব’ তারকারা যখন ভূতের খোঁজে পথে!

রাত তখন ১১:৩০। উত্তর কলকাতার কুমোরটুলির ব্যস্ততা স্তব্ধ, আকাশে মেঘ, চাঁদের আলো ঘোলাটে। এই নিস্তব্ধতায় শুরু হল ‘ভূতপূর্ব’ সিনেমার তারকাদের এক বিশেষ অভিযান—কলকাতার ভূতুড়ে ইতিহাস ঘেঁটে দেখা, সেই সব জায়গায় পা রাখা, যেগুলোর নাম শুনলেই গায়ে কাঁটা দেয়।

রূপাঞ্জনা মিত্র, সত্যম ভট্টাচার্য, সুহোত্র মুখোপাধ্যায় ও সপ্তর্ষি মৌলিক—এই চার তারকা রাতের কলকাতায় বেরিয়ে পড়লেন শহরের বিখ্যাত কিছু ‘ভৌতিক’ ঠিকানার সন্ধানে। সঙ্গে ছিলেন আনন্দবাজার ডট কম এবং ট্যুর গাইড অভিজিৎ ধর।

অভিযানের শুরু ‘পুতুলবাড়ি’ থেকে। আহিরিটোলার এই ঊনবিংশ শতকের ভাঙাচোরা বাড়ির ছাদে এক কালে ছিল অগুনতি পুতুল। আজও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি পুতুল—নীরব সাক্ষী সেই অতীতের। সামনে ল্যাম্পপোস্টের দপদপে আলো, ভেতরে অন্ধকার। সত্যমের গলায় শোনা গেল, “ভূতে বিশ্বাস না থাকলেও অনুভূতি একটা থাকেই।”

এরপর গন্তব্য জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। বাইরে দাঁড়িয়ে আলোচনায় উঠে আসে কাদম্বরী দেবীর অকাল মৃত্যু, রবীন্দ্রনাথের প্ল্যানচেট করার গুঞ্জন। অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা বলেন, “সুইসাইড নোট শুনে মন ভার হয়েছিল। ইতিহাস এখানে যেন শ্বাস নেয়।” ঠাকুরবাড়ি পেরিয়ে তাঁরা পা রাখলেন সিরিয়াল কিলার ত্রৈলোক্যর বাড়ির সামনে। পলেস্তারা খসে যাওয়া ভাঙা বাড়ির জানলায় টর্চ ফেলতেই শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত। এখানেই একাধিক খুন করে দেহ লুকিয়ে ফেলেছিলেন ত্রৈলোক্য। রূপাঞ্জনার স্বীকারোক্তি, “তাই সঙ্গে করে হনুমান চালিশা এনেছি।”

এরপর রাত ১:১৫ নাগাদ তাঁরা পৌঁছন রেড ক্রশ প্যালেস রোডে, এককালের berüchtigte ‘ফাঁসি গলি’। এক সময় ইংরেজরা এখানেই ভারতীয়দের ফাঁসি দিত। সত্যম, সুহোত্রদের মুখে তখন আর কৌতূহলের উচ্ছ্বাস নেই, বরং ইতিহাসের ভারে যেন গম্ভীরতা ছড়িয়ে পড়ে। সপ্তর্ষি বলেন, “আমি যুক্তিতে বিশ্বাস করি, তবে রাতের নির্জনতা অন্য অনুভব জাগায়।”

শেষ গন্তব্য লালদিঘির পাশের জিপিও চত্বর। অভিজিৎবাবু জানান, এক সময় এখানে ছিল কবরখানা। ব্রিটিশ আমলে কলেরা ও কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত কর্মীদের কবর দেওয়া হত এই জায়গাতেই। শুনে চোখ বড় হয়ে যায় সুহোত্রর। ইতিহাসপ্রেমী এই অভিনেতা বলেন, “জানি না, কার কবরের উপর দিয়ে হাঁটছি। তবে রাতের কলকাতা এত প্রাণবন্ত আর ইতিহাসজড়ানো—এটা আমার প্রথম অনুভব।”

ঘড়িতে তখন প্রায় সকাল ৩টা। কেউ কেউ বাড়ি ফেরার কথা ভাবছেন, কেউ আবার মনে মনে ভাবছেন—ভূতের সন্ধান কি সত্যিই পাওয়া গেল? উত্তর নেই, কিন্তু অনুভূতি রয়ে গেল গভীর।

পশ্চিমবঙ্গের পহেলগাঁও: পুরুলিয়ার টুরগা উপত্যকার সবুজ মোহে মুগ্ধ দেশ, আপনি যাবেন কবে?

Read more

Local News