কর-নবান্নে পালান শুরু!
বড় পরিবর্তন কাঁপিয়ে দিয়েছে ইউরোপের পুরনো গৃহরাজ্য ব্রিটেনে। লেবার পার্টির নতুন সরকার নন-ডোম (non-dom) সুবিধা বাতিল করে দিয়েছেন এবং উত্তরাধিকার কর — ইনহেরিট্যান্স ট্যাক্স — কার্যকরে এনেছেন। এর ফলে জন্মগত বা বিদেশি সম্পত্তির ওপর ভাইএসরহতো সোরে উপরে বড় কর আরোপিত হতে পারে; করের হার শোনা যাচ্ছে প্রায় চতুর্থাংশের কাছাকাছি। এই নীতিগত পরিবর্তনেই উদ্বেগে, উদ্বাস্তু ভারতের শীর্ষধনীরাও ভেসে যাচ্ছেন — সবার সামনে নাম লক্ষ্মী মিত্তল।
লক্ষ্মী মিত্তল তিন দশক ধরে লন্ডনকে নিজের ঠিকানা করে রেখেছিলেন। টেমস তীরবর্তী ‘তাজ মিত্তল’—বড় বাড়ি, বৈভব, প্রাসাদ—সবই সেই শহরের অংশ। তবু নতুন করনীতি উনি যেমন বিবেচনা করছেন, তেমনই বহু অভিজাত ব্রিটিশ-ভারতীয় ও দেশীয় ধনকুবেরের মনে অনিশ্চয়তা ও ক্ষোভ বাড়িয়েছে। প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে—ব্রিটেনে বসবাস করা অবস্থায় বিদেশি বা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অমুল্য সম্পত্তির ওপর কেন লেগে থাকবে ব্রিটেনের কর? অনেকেরই মত, বিশ্বব্যাপী সম্পদকে এক দেশে নিয়ন্ত্রণ করার ধারনাই অযৌক্তিক।
নতুন লেবার নীতিগুলোকে ঘিরে কার্যত ২২৬ বছর পুরনো ‘কিছুটা রেওয়াজ’ বদলে গেল বলে সংবাদমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে। নন-ডোম র্যুটিনের অবসান থেকে শুরু করে উত্তরাধিকার কর আরোপ — এই শৃঙ্খলে অনেকে দেখেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও সম্পত্তির স্বাতন্ত্র্যের ওপর আঘাত। ফলে লন্ডন ছাড়ার আগ্রহ তীব্র। ধারনা করা হচ্ছে — দু’য়েক হাজার নয়, বৃহত্তর পরিসরে হাজার হাজার সম্পদশালী বিদেশে পাড়ি দেবেন।
আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স এবং অন্যান্য রিপোর্টে বলা হচ্ছে, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, করধারণ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ না থাকা — এসব মিলে ধনীরা দেশত্যাগের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ২০২৫ সালে বিশ্বের প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার ধনী দেশ বদলাবার পরিকল্পনা করেছেন; তাদের মধ্যে ব্রিটেনই শীর্ষে। আর ‘নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথ’-এর বিশ্লেষণে লন্ডন গত দশকে নিজের অনেক ধনী বাসিন্দাকে হারিয়েছে—কয়েক হাজার কোটিপতি ইতিমধ্যে স্থায়ীভাবে বিদেশে চলে গেছেন বা চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন।
লন্ডন ত্যাগ করে ধনীরা কোথায় যাচ্ছেন? দুবাই, আবু ধাবি, সুইজারল্যান্ড প্রবর দেশগুলোর নাম উঠে আসছে। কারণ সেখানে তুলনামূলকভাবে উত্তরাধিকার কর কম বা নেই, বিনিয়োগ-আকৃষ্ট নীতিমালা আছে, আর উচ্চমানের জীবনযাত্রা ও সুরক্ষা নিশ্চিত। বহু উদ্যোক্তা-ধনীরাও ইতোমধ্যেই গন্তব্য বদলিয়েছেন—কেউ কেউ ব্যবসার সুবিধা ও ট্যাক্স পলিসি যুক্তি দেখান।
অবশ্য সব ধনীরাই লন্ডন ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন না; কেউ ভেবেও সম্পত্তি বিক্রি নাও করতে চান। মিত্তলের মতো অনেকে লন্ডনে থাকা বাড়ি বিক্রি না করে রেখেও নতুন করে অন্য দেশে বসবাস ঠিক করতে পারেন। ফলে লন্ডনের অর্থ-সামাজিক পরিবেশে এ উদ্বাস্তু ঢেউয়ের কি প্রভাব পড়বে — তা সময়ই বলে দেবে। লেবার সরকারের করনীতি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে বলেই অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন; বিনিয়োগ, সম্পত্তি মূল্য, রেয়েল এস্টেট মার্কেট ও লন্ডনের বৈশ্বিক মর্যাদা—সবই এই সিদ্ধান্তের ফলে পুনর্মূল্যায়নের মুখে পড়েছে।

