কর্মক্ষমতা বাড়ায় জাপানের ‘ইনেমুরি’
আজকের ব্যস্ত জীবনে শরীর ও মনের সুস্থতা বজায় রাখা যেন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক এ কারণেই জাপানের এক বিশেষ ঘুমের অভ্যাস ‘ইনেমুরি’ নিয়ে কৌতূহল বেড়েছে বিশ্বজুড়ে। ‘ইনেমুরি’ অর্থাৎ দিনে, জেগে থাকতে থাকতে ছোটখাটো ঘুম, যা জাপানি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই পদ্ধতিকে তারা শুধু অবসর হিসেবেই নয়, বরং কর্মক্ষমতা বাড়ানোর ও মানসিক চাপ কমানোর এক অমূল্য হাতিয়ার হিসেবেও দেখে।
‘ইনেমুরি’ শব্দের সরল অর্থ হল ‘জেগে থাকা অবস্থায় ঘুমানো’। দিন চলাকালীন কর্মক্ষেত্র, ট্রেন বা বাসের ভেতরে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের এই ক্ষণস্থায়ী নিদ্রা মূলত শরীর ও মনের পুনরুজ্জীবনের কাজ করে। এই অভ্যাসের মাধ্যমে জাপানিরা ক্লান্তি কমিয়ে কাজের প্রতি মনোযোগ ও কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলেন। এমনকি দেশটিতে আলাদা ‘ইনেমুরি’ কেন্দ্রও রয়েছে, যেখানে মানুষ শিথিল হয়ে দ্রুত ঘুমিয়ে উঠে আবার কাজের তালে ফিরতে পারেন।
আজকের বিশ্বে প্রচণ্ড ব্যস্ততার মাঝে ঘুমের অভাব একটি বড় সমস্যা। অনিয়মিত জীবনযাপন, উদ্বেগ ও কাজের চাপের ফলে অনেকেরই রাতে পর্যাপ্ত ঘুম হয় না, যা কর্মদক্ষতাকে ব্যাহত করে। এ অবস্থায় ‘ইনেমুরি’ অভ্যাস গ্রহণ করলে দেহ ও মনের ক্লান্তি দূর হয়, উদ্বেগ কমে এবং মনোবল বাড়ে।
এই পদ্ধতি অনুসরণের জন্য প্রথমে সময় ও স্থান নির্ধারণ করা জরুরি। ট্রেন, বাস কিংবা অফিসের নির্দিষ্ট কোনো কোণে অল্প সময়ের জন্য ঘুমাতে হবে, তবে বিছানায় শুয়ে নিদ্রা নেবেন না। মোবাইলে টাইমার সেট করা উচিত, যাতে ২০ মিনিটের বেশি ঘুম না হয়। ঘুমের সময় চেয়ারে হেলান দিয়ে বা টেবিলের ওপর মাথা রেখে বিশ্রাম নেওয়া যায়। ঘুম থেকে উঠে খুব ধীরে ধীরে চোখ খুলে আবার কাজ শুরু করতে হবে। দিনে একাধিকবার ‘ইনেমুরি’ করা ঠিক নয়, কারণ এতে রাতের ঘুম ব্যাহত হতে পারে।
চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, সারা দিনের ছোট ছোট বিরতির ঘুম শরীর ও মনের জন্য খুব উপকারী। স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ অনিমেষ কর বলেন, “যারা রাতে পর্যাপ্ত ঘুম পান তাদের জন্য ‘ইনেমুরি’ বিশেষ প্রয়োজনীয় নয়, তবে যারা ঘুমের অভাব বোধ করেন, তাদের জন্য এটি খুব উপকারী।” তবে তিনি সতর্ক করে দেন, দুপুরের পর এ ধরনের ঘুম নেওয়া উচিত নয়, কারণ সন্ধ্যায় এ ধরনের ঘুম শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া দুপুরে একবারে এক ঘণ্টার বেশি ‘ইনেমুরি’ করা যাবে না, কারণ বেশি ঘুম হলে ঘুম থেকে ওঠার পর কাজে মন বসতে দেরি হতে পারে।
অর্থাৎ, ‘ইনেমুরি’ হচ্ছে আধুনিক জীবনের এক প্রয়োজনীয় উপায়, যা মনের প্রশান্তি ও কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে জীবনের মান উন্নত করে। তবে এটি নিয়ম ও পরিমিতি মেনে চর্চা করতে হবে, যাতে ঘুম থেকে ওঠার পরে যেন কাজের প্রতি মনোযোগ ঠিক থাকে এবং দিনের বাকি সময়ে মন ভালো থাকে। জাপানিদের এই নিবিড় অভ্যাস আমাদের কাছেও হতে পারে এক নতুন অনুপ্রেরণা, যা দ্রুত গতি ছাড়ানো জীবনে একটি ক্ষণিকের শান্তির মুহূর্ত এনে দিতে পারে।
বাড়ির আতঙ্ক কাটিয়ে জীবন বদলের পথে করিনা: চুয়াল্লিশে পা দিয়েই নিলেন এক দৃঢ় সিদ্ধান্ত

