ডায়াবিটিস-হার্টের রোগীদের জন্য ঘরোয়া স্বাস্থ্যকর কৌশল!
বাড়িতে ডায়াবিটিস, হার্টের রোগী বা ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকা সদস্য থাকলে রোজকার রান্না নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতেই হয়। চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদেরা বারবার সতর্ক করেন— যে কোনও তেলই কম খাওয়া ভাল। অতিরিক্ত তেল-মশলা শরীরের উপরে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু আমাদের ঐতিহ্যবাহী রান্নায় কষানো, ঝোল-ঝাল—এসবের স্বাদ কি তেল ছাড়া ঠিকমতো পাওয়া যায়? অনেকেই মনে করেন, তেল-ঝালেই লুকিয়ে আছে খাবারের স্বাদ। অথচ সামান্য কৌশল জানলেই অত্যন্ত সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায় অতি কম তেলে। এই কারণে শুধু রোগী নয়, সুস্থ মানুষদের পক্ষেও এই রান্নার অভ্যাস দারুণ উপকারী।
কেন তেল কমানো জরুরি?
সর্ষে, সয়া বা রিফাইন্ড—যাই হোক না কেন, অতিরিক্ত তেল শরীরে জমে বাড়ায় ওজন, ক্ষতি করে হার্ট, লিভার, এমনকি রক্তে শর্করার মাত্রাকেও প্রভাবিত করে। ডায়াবিটিক বা হৃদ্যন্ত্রের সমস্যায় ভোগা মানুষদের জন্য তো বটেই, সুস্থ মানুষকেও তাই কম তেলের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। তবে স্বাদের সঙ্গে আপস করতে হবে—এই ধারণা ভুল। সঠিক পদ্ধতিতে রান্না করলেই কম তেলেও খাবার হয় সুস্বাদু।
১. প্রেশার কুকার আপনার সেরা সঙ্গী
অনেক কম তেলে রান্না করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল প্রেশার কুকার ব্যবহার করা।
- আলুর দম, কপি, এঁচোড়—যে কোনও কষানো আইটেম অল্প তেলে পেঁয়াজ–রসুন–মশলা হালকা ভেজে কুকারে সেদ্ধ করলে অসাধারণ স্বাদ পাওয়া যায়।
- কড়াইতে এই রান্না করতে গেলে বেশি তেল লাগে। কিন্তু কুকারে চাপের তাপে সব্জি ও মশলা একসঙ্গে মিশে গিয়ে তৈরি হয় সমান স্বাদ—তাও আবার স্বাস্থ্যকর!
২. ভাপে রান্না—স্বাস্থ্য আর স্বাদের নিখুঁত মেলবন্ধন
সব্জি আগে সামান্য ভাপিয়ে নিলে তেলের প্রয়োজন অনেক কমে যায়।
- ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বানাতে চাইলে আলু টুকরো করে ৩০ মিনিট জলে ভিজিয়ে রেখে ৫–৭ মিনিট ভাপিয়ে নিন।
- গরম জল ঝরিয়ে ঠান্ডা জলে ডুবিয়ে রাখুন, জল মুছে নিয়ে অল্প তেলে কম আঁচে ভেজে নিলেই তৈরি হবে ক্রাঞ্চি ফ্রাই—একেবারে দোকানের মতো, কিন্তু অনেক স্বাস্থ্যকর।
চাউমিন, ভাজা সব্জি—যে কোনও রান্নায় আগে ভাপ দিলে তেলের ব্যবহার ৫০% পর্যন্ত কমে যায়।
৩. এয়ার ফ্রায়ার—কম তেলে তন্দুরি ও ভাজাভুজির সমাধান
আজকাল অনেক বাড়িতে এয়ার ফ্রায়ার আছে।
- তন্দুরি চিকেন থেকে চপ–কাটলেট—অতি কম তেলেই নিখুঁত টেক্সচার পাওয়া যায়।
- প্রয়োজনে পরে সামান্য কড়াইয়ে কাই তৈরি করে মাখিয়ে দিতে পারেন।
যাঁরা তেল এড়িয়ে খাবার চান, তাঁদের জন্য এটি আদর্শ।
৪. কাই (গ্রেভি) বানানোর স্বাস্থ্যকর উপাদান
ঝোল বা গ্রেভি ঘন করতে তেল বাড়ানোর দরকার নেই। তার বদলে ব্যবহার করতে পারেন—
- জল ঝরানো টক দই
- নারকেলের দুধ
- কাজুবাটা বা তিলবাটা
এসব প্রাকৃতিক উপাদান স্বাদ বাড়ায়, অথচ তেলের প্রয়োজন পড়ে খুবই কম। মাংস বা মাছেও দই মেখে মেরিনেট করলে কম তেলেই নিখুঁত রান্না করা যায়।
৫. বেক ও স্টিম—আধুনিক রান্নার সেরা বিকল্প
ভাপা চিকেন, ভাপা মাছ, বেকড সব্জি—এই সব রেসিপি তেল প্রায় লাগে না বললেই চলে। সঠিক মশলার অনুপাতই এখানে মূল বিষয়।
শেষ কথা
তেল কম মানেই স্বাদ কম—এই ধারণা একেবারে ভুল। সামান্য সচেতনতা, সঠিক রান্নার কৌশল আর তাজা উপাদান ব্যবহার করলেই কম তেলে, কম মশলায় তৈরি হয় অসাধারণ সুস্বাদু পদ। ডায়াবিটিস, হার্টের রোগী তো বটেই, পুরো পরিবারের জন্যই এই রান্না স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে পরিণত হতে পারে।

