Saturday, February 8, 2025

ওয়াশিংটনের বিমান দুর্ঘটনা: পাইলটের ভুলেই কি সংঘর্ষ? ব্ল্যাকবক্সে উঠছে প্রশ্ন

Share

ওয়াশিংটনের বিমান দুর্ঘটনা

ওয়াশিংটনের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে একের পর এক নতুন তথ্য উঠে আসছে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের ব্ল্যাকবক্স বিশ্লেষণের পর তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন, সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারের পাইলট সম্ভবত রাতের বিশেষ চশমা (নাইট ভিশন গগলস) পরেননি। এই ত্রুটির কারণেই কি চপারটি প্রয়োজনের তুলনায় বেশি উচ্চতায় উঠে গিয়েছিল এবং যাত্রিবাহী বিমানের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল? এনটিএসবি (ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড) এখনও নিশ্চিত কোনো কারণ জানায়নি, তবে তদন্তের ফলাফলে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে আসছে।

ব্ল্যাকবক্স বলছে কী?

তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, দুর্ঘটনার মুহূর্তে যাত্রিবাহী বিমানটির উচ্চতা ছিল ৩২৫ ফুট, আর সেনাবাহিনীর চপারটি উড়ছিল ২০০ ফুটের বেশি উচ্চতায়। অথচ, ওই রুটে চপারগুলোর জন্য সর্বোচ্চ নির্ধারিত উচ্চতা ছিল ২০০ ফুট। অর্থাৎ, হেলিকপ্টারটি অনুমোদিত সীমা অতিক্রম করেছিল। শনিবার সন্ধ্যায় (স্থানীয় সময়) এনটিএসবির প্রকাশিত বিবৃতিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিটি বিমানের মতো এই যাত্রিবাহী বিমানেও ব্ল্যাকবক্স ছিল, যেখানে বিমানের উচ্চতা, গতিবিধি, ককপিটের কথোপকথনসহ গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য রেকর্ড করা হয়। দুর্ঘটনার পরপরই পটোম্যাক নদী থেকে উদ্ধার করা হয় এই ব্ল্যাকবক্স।

পাইলটের ভুল নাকি প্রযুক্তিগত ত্রুটি?

তদন্তে উঠে এসেছে, হেলিকপ্টারটি সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিল এবং পাইলটের নাইট ভিশন গগলস পরার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আদৌ তা পরেছিলেন কি না, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নয় তদন্তকারী দল। এনটিএসবি-র সদস্য টড ইনম্যান জানিয়েছেন, “আমরা নিশ্চিত নই যে পাইলট চশমা পরেছিলেন কিনা। তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা তদন্তে আমাদের নজরে রয়েছে। বিষয়টি আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হবে।”

বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষেও ত্রুটি?

বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বিমানটি ওয়াশিংটনের রেগান ন্যাশনাল বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা ছিল। অভিযোগ উঠেছে, দুর্ঘটনার সময় বিমানবন্দরের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পর্যাপ্ত কর্মী ছিলেন না। সাধারণত এমন পরিস্থিতিতে এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য দু’জন কর্মী থাকার কথা থাকলেও, তখন মাত্র একজন কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

তবে দুর্ঘটনার ঠিক দুই মিনিট আগে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার কপ্টারটিকে সতর্ক করেছিল। বিমানের অবস্থান সম্পর্কে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছিল হেলিকপ্টারের পাইলটকে। ব্ল্যাকবক্স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সংঘর্ষের মাত্র এক সেকেন্ড আগে বিমানের পাইলট মৌখিক বার্তা পেয়েছিলেন। বিমানের মুখ ওপরে তোলা হলেও সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়নি, এবং সঙ্গে সঙ্গেই এক ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

প্রাণহানির মর্মান্তিক চিত্র

এই দুর্ঘটনায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে থাকা তিনজনের মধ্যে দু’জনের নাম আগেই প্রকাশ করা হয়েছিল। শনিবার পাইলটের নামও প্রকাশ করেছে আমেরিকান সেনা। নিহতরা হলেন:
🔹 স্টাফ সার্জেন্ট রিয়ান অস্টিন ও’হারা (২৮)
🔹 চিফ ওয়ারান্ট অফিসার অ্যান্ড্রু লয়েজ ইভস (৩৯)
🔹 ক্যাপ্টেন রেবেকা লোবাক

এদিকে, যাত্রিবাহী বিমানটিতে মোট ৬৭ জন যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনার পর থেকে উদ্ধারকাজ চলছে, এবং এখন পর্যন্ত নদী থেকে ৪২টি দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। নিহতদের অনেককেই পরিবার শনাক্ত করেছে, তবে বাকিদের পরিচয় শনাক্তের কাজ এখনো চলছে।

তদন্তের পরবর্তী ধাপ

তদন্তকারীরা এখন বিমান এবং হেলিকপ্টারের রুট, গতিবিধি, নিয়ন্ত্রণকক্ষের কার্যকারিতা এবং পাইলটের সমস্ত কার্যকলাপ খতিয়ে দেখছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই দুর্ঘটনার মূল কারণ নিশ্চিত হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়ানোর জন্য নতুন নিয়ম চালু করা হতে পারে।

এখন প্রশ্ন হলো, এটি কি শুধুমাত্র পাইলটের অসাবধানতার ফল, নাকি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনও গাফিলতি ছিল? তদন্তের চূড়ান্ত ফলাফলই এর সঠিক উত্তর দিতে পারবে। তবে এ কথা নিশ্চিত যে, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বিমান চলাচলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নতুনভাবে পর্যালোচনার প্রয়োজনীয়তা সামনে এনে দিয়েছে।

মধ্যবিত্তদের জন্য সুখবর! ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে আর কোনও আয়কর নয়

Read more

Local News