বিমান দুর্ঘটনা
ওয়াশিংটনের ঠিক উপরে, হোয়াইট হাউস থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে ঘটল এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা। আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৫৩৪২ যখন রোনাল্ড রেগান ওয়াশিংটন বিমানবন্দরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখনই আকাশে ঘটে গেল মারাত্মক সংঘর্ষ। আমেরিকার সেনা বাহিনীর একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার এসে ধাক্কা মারে যাত্রীবাহী বিমানের পেটে। মুহূর্তের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটে, আর আগুনের গোলায় পরিণত হয় দুই উড়ান।
এই ঘটনায় বিমানে থাকা ৬৪ জন যাত্রীর মধ্যে ১৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গেছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। দুর্ঘটনাস্থলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়—এখান থেকে খুব কাছেই রয়েছে হোয়াইট হাউস, ক্যাপিটল হিল এবং পেন্টাগন। ফলে এই সংঘর্ষ কেবলমাত্র একটি বিমান দুর্ঘটনা নয়, এটি নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?
স্থানীয় সময় রাত ৯টা, আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ৫৩৪২ ফ্লাইটের অবতরণ করার নির্ধারিত সময়। পাইলট নির্দেশিত পথেই বিমানটিকে নিচে নামাচ্ছিলেন। বিমানবন্দর থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের দূরত্বে, পোটোম্যাক নদীর মাঝ বরাবর যখন বিমানটি পৌঁছায়, তখনই সেটির সঙ্গে একই উচ্চতায় চলে আসে আমেরিকার সেনাবাহিনীর একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার।
সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কিছু মুহূর্ত আগে কন্ট্রোল রুম থেকে কপ্টারের পাইলটের কাছে রেডিও বার্তা পাঠানো হয়েছিল। বার্তাটি ছিল—
“প্যাট২৫, তুমি কি সামনে আসা সিআরজে বিমানটি দেখতে পাচ্ছ?”
কিন্তু কপ্টার থেকে কোনো উত্তর আসেনি। কিছুক্ষণ পর ফের বার্তা পাঠানো হয়, কিন্তু তাতেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ঠিক সেই সময়েই, সেনার কপ্টারটি বিমানের নিচের দিকে সজোরে ধাক্কা মারে। সংঘর্ষের সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। পুরো আকাশ আগুনের লেলিহান শিখায় ভরে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুনের গোলাটি মাঝ নদীতে আছড়ে পড়ে।
কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে শেষ মুহূর্তের কথোপকথন
সংঘর্ষের আগে বিমানের পাইলটের সঙ্গে কন্ট্রোল টাওয়ারের যে কথোপকথন হয়েছে, তার একটি রেকর্ডিং প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও এর সত্যতা এখনো যাচাই করা হয়নি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিমানটির পাইলটকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল—
“রানওয়ে ৩৩ দিয়ে কি বিমানটি নামাতে পারবেন?”
পাইলট তাতে সম্মতি জানালে, তাকে অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়। বিমানের গতি কমিয়ে ধীরে ধীরে নিচে নামতে শুরু করেন পাইলট। কিন্তু তখনই ঘটে বিপর্যয়—উল্টো দিক থেকে আসা সেনার ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার সজোরে ধাক্কা মারে বিমানে।
বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটা?
দুর্ঘটনার পরপরই জরুরি উদ্ধারকারী দল এবং সেনা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তবে বাকি ৪৬ জন যাত্রীর কী অবস্থা, তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন—
“আমি দেখি, বিশাল আগুনের গোলা পুরো আকাশ ঢেকে ফেলল! কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সব কিছু নদীর মধ্যে হারিয়ে গেল। আমি বুঝতেই পারিনি, কীভাবে এটা ঘটল!”
এদিকে, উদ্ধারকাজ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। কারণ, দুর্ঘটনাস্থল নদীর মাঝ বরাবর হওয়ায় সেখানে পৌঁছানো বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কে?
এই সংঘর্ষের জন্য দায় কার, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
- এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের ভুল?
- কেন কপ্টার এবং বিমানের গতিপথ একই উচ্চতায় রেখে দেওয়া হলো?
- কেন কপ্টারের পাইলট কন্ট্রোল রুমের বার্তায় সাড়া দেননি?
- সেনাবাহিনীর ত্রুটি?
- ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারটি কি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল?
- নাকি সেটি ভুলবশত নিষিদ্ধ আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছিল?
- সন্ত্রাসী হামলা নয় তো?
- দুর্ঘটনাস্থলের ঠিক পাঁচ কিলোমিটার দূরেই হোয়াইট হাউস, ক্যাপিটল হিল এবং পেন্টাগন।
- আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাও (NSA) বিষয়টি খতিয়ে দেখছে, কারণ এটি কোনো সন্ত্রাসী পরিকল্পনা ছিল না তো?
উপসংহার
ওয়াশিংটনের এই ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা সমগ্র বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। সেনা কপ্টার এবং যাত্রীবাহী বিমানের সংঘর্ষ নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
এটি নিছকই একটি দুর্ঘটনা, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো বড় কারণ লুকিয়ে আছে? এর উত্তর এখনও মেলেনি। তবে ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল সংস্থা (FAA) এবং ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (NTSB) ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই হয়তো পরিষ্কার হবে— কীভাবে ঘটল এই মর্মান্তিক সংঘর্ষ? কেন সেনা কপ্টার কন্ট্রোল রুমের ডাকে সাড়া দেয়নি? আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন— এ ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে আটকাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে?
শ্রীদেবী-কন্যা খুশি কপূরের বদলে যাওয়া মুখ, নাক, ঠোঁটের গড়ন: অস্ত্রোপচারের গল্প নিজেই শেয়ার করলেন!