ওয়াকফ আইনে স্থগিত নয়!
ওয়াকফ আইন সংশোধন নিয়ে ফের উত্তপ্ত বিতর্ক। সংশোধিত ওয়াকফ আইন ২০২৫ নিয়ে বুধবার সুপ্রিম কোর্টে প্রায় ৭০টি আবেদন একত্রিত করে শুনানি হয়। আবেদনকারীরা এই আইনে স্থগিতাদেশ চাইলেও, আপাতত তা দেয়নি দেশের শীর্ষ আদালত। তবে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অন্তর্বর্তী নির্দেশের কথা ভাবছিল। শেষ মুহূর্তে কেন্দ্রের অনুরোধে সেই সিদ্ধান্তও আপাতত স্থগিত।
সুপ্রিম কোর্টের এই শুনানিতে সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় ছিল—জেলাশাসককে ওয়াকফ সম্পত্তি নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়া, অমুসলিম সদস্যদের ওয়াকফ বোর্ডে রাখার অনুমতি এবং ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ ধারা। এই তিনটি ক্ষেত্রেই প্রশ্ন তুলেছেন আবেদনকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বল।
তিন অন্তর্বর্তী নির্দেশ কী ছিল?
১. কোনও সম্পত্তিকে একবার আদালত ওয়াকফ বললে, মামলা চলাকালীন কেউ তা ‘ওয়াকফ নয়’ বলে দাবি করতে পারবে না।
২. জেলাশাসক কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি না, সেই নিয়ে তদন্ত চালাতে পারবেন, তবে তার সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না।
৩. ওয়াকফ বোর্ডে এবং কাউন্সিলে সদস্যরা মুসলিম হতে হবে—পদাধিকারবলে যুক্ত হওয়া সদস্য ব্যতিক্রম।
এই প্রস্তাবিত নির্দেশের বিষয়ে শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘আমরা সাধারণত অন্তর্বর্তী নির্দেশ দিই না, কিন্তু এটি ব্যতিক্রম।’’ তবে কেন্দ্র সরকারের আইনজীবীরা আরও সময় চেয়ে অনুরোধ জানান, যাতে তারা এই তিন বিষয়ে বিস্তারিত যুক্তি তুলে ধরতে পারেন। বিচারপতির বেঞ্চ সেই আর্জি মেনে বৃহস্পতিবার ফের শুনানির দিন নির্ধারণ করেছে।
‘অমুসলিম সদস্য’ ইস্যুতে বিতর্ক
নতুন আইনে বলা হয়েছে, ওয়াকফ বোর্ডে ‘অন্তত’ দু’জন অমুসলিম সদস্য থাকতে পারেন। এই শব্দটি নিয়েই আপত্তি তুলেছেন কপিল সিব্বল। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘হিন্দুদের সম্পত্তি সংক্রান্ত বোর্ডে কি কোনও মুসলিম সদস্য রাখা হয়?’’ পাল্টা জবাবে সরকারি আইনজীবী তুষার মেহতা বলেন, বোর্ডে অমুসলিম সদস্য রাখার কথা থাকলেও সংখ্যা নির্ধারণ করা আছে।
জেলাশাসকের ক্ষমতা নিয়ে সংশয়
সংশোধিত আইনে জেলাশাসক বা সমপদস্থ আধিকারিক নির্ধারণ করতে পারবেন, কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ কি না। সিব্বলের মতে, ‘‘জেলাশাসক সরকার ব্যবস্থার অংশ। তিনিই যদি সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তা অসাংবিধানিক হয়ে দাঁড়ায়।’’
প্রধান বিচারপতি এই যুক্তি শুনে সরকারের দিকেই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, ‘‘জেলাশাসক যদি সিদ্ধান্ত দেন, কোন সম্পত্তি ওয়াকফ, কোনটা নয়—তা কি সংবিধানসঙ্গত?’’
‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ প্রসঙ্গ
এই ধারায় বলা হয়, কোনও সম্পত্তি বহু বছর ধরে ধর্মীয় বা জনসেবামূলক কাজে ব্যবহৃত হলে, তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়াকফ হিসাবে ধরে নেওয়া হয়। কপিল সিব্বল এটিকে ইসলাম ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করেন। সরকার পক্ষ এই ধারা বাতিল করতে চাইলেও, প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন—‘‘চতুর্দশ বা পঞ্চদশ শতকে তৈরি মসজিদের নথি আজ কীভাবে সংগ্রহ করা সম্ভব?’’
সব মিলিয়ে, ওয়াকফ আইন নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক এখন চরমে। শীর্ষ আদালতের চূড়ান্ত রায় কী হবে, তার দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ।
মুর্শিদাবাদে ধীরে ধীরে স্বস্তির হাওয়া, ঘরছাড়াদের ফেরাতে প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগ