ওড়িশা-ছত্তীসগঢ় সীমানায় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ১৪ মাওবাদী
ওড়িশা ও ছত্তীসগঢ় সীমানায় নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে এক রাতব্যাপী সংঘর্ষে ১৪ জন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, এই সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে এক জনের মাথার দাম ছিল ১ কোটি টাকা। নিহত মাওবাদীর নাম ছিল জয়রাম, যিনি মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন এবং ‘চালাপাতি’ নামেও পরিচিত ছিলেন। এই অভিযানকে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে এক বড় সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
রাতভর গুলির লড়াই, মাওবাদীদের বিরুদ্ধে বড় সাফল্য
এই সংঘর্ষটি ঘটে যখন সিআরপিএফ, ওড়িশার এসওজি (স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ) এবং ছত্তীসগঢ় পুলিশ যৌথভাবে মাওবাদীদের খোঁজে একটি তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে আন্তঃরাজ্য অভিযান চালানো হচ্ছিল, এবং সি.আর.পিএফ. ও পুলিশের যৌথবাহিনী সোমবার ওড়িশার নওপাড়া এবং ছত্তীসগঢ়ের গরিয়াবন্দ এলাকায় মাওবাদীদের জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে অভিযান শুরু করে।
তারা যখন অভিযান চালাতে শুরু করেছিল, তখন মাওবাদীরা পুলিশের দিকে গুলি ছোড়ে। যৌথবাহিনী পাল্টা জবাব দেয়, এবং রাতভর গুলির লড়াই চলে। পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষে ১২ জন মাওবাদী নিহত হয়েছেন, তবে দলটির মোট সদস্য সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়। ওই এলাকায় তল্লাশি চলছে এবং মাওবাদীদের আরও কোনও সদস্য লুকিয়ে থাকতে পারে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে।
গোপন সূত্রে খবর এবং তল্লাশি অভিযান
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোপন সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছিল যে, সীমানা এলাকায় মাওবাদীরা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতে যৌথবাহিনী দ্রুত ওই এলাকায় পৌঁছায় এবং মাওবাদীদের ঘিরে ফেলে। এরপর শুরু হয় গুলির লড়াই। পুলিশ আরও জানায়, সংঘর্ষে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র এবং বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে, যা মাওবাদীদের আগাম পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা দেয়।
পুলিশের দাবি, সংঘর্ষে মোট ১২ জন নয়, বরং আরও বেশি সংখ্যক মাওবাদী নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি, ১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া আন্তঃরাজ্য অভিযান চলাকালীন মাওবাদীদের গেরিলা বাহিনীর দুই সদস্য ছত্তীসগঢ়ের গরিয়াবন্দ জেলায় নিহত হয়েছেন।
আইইডি বিস্ফোরণে আহত দুই সিআরপিএফ জওয়ান
এই অভিযান চলাকালীন ১৭ জানুয়ারি ছত্তীসগঢ়ের বস্তারে মাওবাদীদের পুঁতে রাখা একটি আইইডি বিস্ফোরণে সিআরপিএফের দুটি বিশেষ বাহিনীর জওয়ান আহত হন। সিআরপিএফের ‘কোবরা’ বাহিনীর ২০৬ ব্যাটালিয়নের কমান্ডোরা ওই সময় রাজ্য সশস্ত্র পুলিশবাহিনীর সঙ্গে বিজাপুরের বাসাগুড়া থানার গভীর জঙ্গলে অভিযান চালাচ্ছিলেন। আইইডি বিস্ফোরণে দুই জওয়ান গুরুতর আহত হন। তবে তারা এখন চিকিৎসাধীন।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই অভিযানকে একটি বড় সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি এক্স (প্রাক্তন টুইটার) এ লিখেছেন, “আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী মাওবাদীমুক্ত ভারত গড়তে আরও একটি বড় সাফল্য অর্জন করেছে।” তিনি নিরাপত্তাবাহিনীর সাহসিকতা এবং আন্তরিকতার প্রশংসা করেছেন, যা মাওবাদী হামলাকে প্রতিরোধ করেছে।
উপসংহার
ওড়িশা-ছত্তীসগঢ় সীমানায় মাওবাদীদের বিরুদ্ধে চলা এই অভিযানে একাধিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে, তবে মাওবাদী কার্যকলাপের মোকাবিলা এখনো শেষ হয়নি। পুলিশের তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং এ ধরনের অভিযান মাওবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে দেখতে পাচ্ছে নিরাপত্তাবাহিনী।

